হাজারো পাখির আপন ঠিকানা ‘নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি’

বাড়ি ভর্তি গাছগাছালি। আছে বাঁশ-ঝোপঝাড়। গাছের শাখা-প্রশাখায় হরেক রকম পাখির বিচরণ। চারদিকে শুধু পাখি আর পাখি। নিজেদের মতো করেই গাছে গাছে সংসার পেতেছে তারা। পরম মমতায় ছানাদের মুখে খাদ্য পুরে দিচ্ছে মা পাখি। আবার ঝাঁক বেঁধে অনেকে ঘুরছে, খেলছে আপন মনে। দিনভর পাখিদের ব্যস্ত ছোটাছুটি আর কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত বাড়ি। এ যেন পাখিদের আপন ঠিকানা।

চিত্রটি সিলেট সদর উপজেলার খাদিম নগর ইউনিয়নের ছালিয়া গ্রামের ‘নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ির’। বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ঘুরতে আসা পাখিপ্রেমীদের কাছেও পরিচিত এই স্থান এটি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক লাগোয়া ছালিয়া গ্রামের ‘নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি’র অবস্থান। সড়কে থামলেই চোখে পড়ে পাখিদের মিলনমেলা। শোনা যায় হরেক রকম পাখির ডাক। তখন সন্ধ্যা নামছিল। খাবার আহরণ শেষে, আশ-পাশের হাওর-জলাশয় থেকে নীড়ে ফিরছিল পাখিদের ঝাঁক। সব’চে বেশি দেখা মেলে সাদা বক আর পানকৌড়ির। আছে বাবুই, বাঁদুর, তিতির ও কবুতর।

বাড়ির সবক’টি গাছেই পাখিদের নিরাপদ আবাসন। মূল ফটক অতিক্রম করেই চিত্রা হরিণের পাল। এর একটু পরেই বসতঘর। বাম দিকে আছে খাঁচাবন্দী বানর ও উন্মুক্ত ঘোড়া। এসময় পাখি দেখতে বাড়িতে প্রবেশ করেন একাধিক পর্যটক।

গণমাধ্যমকর্মী আব্বাস হোসেন ইমরান বলেন, নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি যেন এক পাখিরাজ্য। চেনা-অচেনা হাজারো পাখির বাস সেখানে। ওই পাখিদের কলতানে মুখরিত নূরুদ্দিনের বাড়িতে গেলে যে কারো মনে আসবে প্রশান্তি।

বাড়ির মালিক এমদাদুল হক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, তার মরহুম পিতা হাজি নূরুদ্দিন ছিলেন পাখিপ্রেমী। ‘খাঁচায় নয়, পাখির বিচরণ মুক্ত আকাশে’-এটি তিনি বলতেন প্রায়ই। স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা পানকৌড়ি ও বকসহ বিভিন্ন জাতের পাখি খরিদ করতেন তিনি।

বাড়ি এনে মুক্ত করে দিতেন আকাশে। প্রায় ২০ বছর পূর্বে তিনি শুরু করেন এ কাজ। ঘুরে ফিরে কিছু পাখি আবার ফিরে অসতো নূরুদ্দিনের বাড়িতে। বাসা বেঁধে ছানা তুলতো। শীতকালে আশ্রয় নিত অতিথি পাখিও। এভাবেই ধীরে ধীরে বংশবৃদ্ধি হয়ে নূরুদ্দিনের দুই একর চল্লিশ শতকের বাড়িটি পাখিরাজ্যে পরিণত হয়। শুরুতে পাখিদের খাবার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন নিজেই। ২০০৪ সালে নুরুদ্দিনের মৃত্যুর পর, তাঁর রেখে যাওয়া শখের পাখিদের দেখাশুনার দায়িত্ব নেন এমদাদুল।

এসএইচ-২০/১১/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)