১১ ঘণ্টা স্কুলের টয়লেটে আটকা এসএসসি পরীক্ষার্থী!

চাঁদপুরের শাহরাস্তির হোসেনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছুটির পর টয়লেটে আটকা পড়ে বাকপ্রতিবন্ধী এসএসসির পরীক্ষার্থী শারমিন আক্তার। তারপর কেটে যায় দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা। এ যেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র কাহিনী। স্কুলের বাথরুমে আটকে পড়ে এক শিশু শিক্ষার্থীর নির্মম মৃত্যুর শিকার হওয়া গল্প তুলে ধরা হয়েছিল ওই সিনেমায়।

তবে শেষপর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে শারমিন আক্তার। ওই বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক পথচারীর চোখে পড়ে এমন অমানবিক দৃশ্য। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার শ্রেণির কার্যক্রম শেষে বিদ্যালয় ত্যাগ করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। কিন্তু সবার অলক্ষ্যে বিদ্যালয়ের টয়লেটে আটকা পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী বাকপ্রতিবন্ধী শারমিন আক্তার। এ সময় তাকে ভেতরে রেখে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শাহান আরা টয়লেটের দরজায় তালা মেরে চলে যান।

এরপর দুপুর থেকে রাত প্রায় ১০টা। ওই সময় এক পথচারী বিদ্যালয়ের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার মুঠোফোনে কল আসে এবং সঙ্গে ফ্লাশলাইট জ্বলে উঠে। আর তখনই টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে কারো হাতের ইশারা তার নজরে পড়ে। মুহূর্তে ছুটে যান সেখানে। তারপর আরও লোকজন ডেকে এনে তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় আটকে পড়া শারমিন আক্তারকে।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। অন্যদিকে, কেনো এমন ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করে তদন্ত কার্যক্রমে অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারী। অন্যদিকে শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়রা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের শাস্তি চেয়েছেন।

তবে সেখানে তালা মারার ঘটনা অস্বীকার করেন চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী শাহান আরা। তিনি দাবি করেন, সবকিছু দেখে শুনে টয়লেটের তালা মেরেছি।

আটকে পড়া শিক্ষার্থীর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, তার মেয়ের মতো অন্য কারো সন্তান যেনো এমন ঘটনার শিকার না হয়। বাকপ্রতিবন্ধী শারমিন আক্তারের সহপাঠী এবং এলাকাবাসীও ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে দায়ীদের শাস্তি চেয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন কথা বলতে অস্বীকার করলেও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীমা চক্রবর্তী বলেন, ভুল করে এমন ঘটনা ঘটায় আমরাও অনুতপ্ত। তবে কেনো এমন ঘটনা ঘটলো, তাও একটু ভেবে দেখা দরকার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নির্দেশে সরেজমিন ঘুরে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত চলছে, কে দায়ী, তা চিহ্নিত করে আগামী দুই একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেব।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, কার ভুলের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা জানিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

২০০০ সালে হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিতি হয়। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী ৩৯৮ জন। আর এবারে এই বিদ্যালয় থেকে শারমিন আক্তারসহ ৪০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

এসএইচ-২৬/১৮/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)