ভিজিডি কার্ড কেড়ে নিলেন চেয়ারম্যান

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এ কারণে ওই ব্যক্তির স্ত্রী খালেদা খাতুনের (৪৫) নামে ভিজিডির চাল না দিয়ে কার্ড কেড়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

অভিযোগ ওঠা সেই ব্যক্তির নাম নওশের আলী বিশ্বাস। তিনি কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই বিষয়ে গত বুধবার কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী মো. আমজাদ হোসেন।

এর আগে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন বিতর্কিত চেয়ারম্যান নওশের আলী। ২৯ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। আগামী ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন প্রার্থী তিনি।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ খালেদা খাতুন দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, তিনি সপরিবারে নন্দলালপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন চরাইকোল এলাকায় বসবাস করেন। প্রতি মাসের মতো গত বুধবার তিনি নিবন্ধিত ভিজিডি কার্ড নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চাল তুলতে গেলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার নির্বাচনে যারা কাজ করবে না তারা কিছুই পাবে না। তোমার স্বামী আমার পক্ষে কাজ করবে না তাই তুমিও কোনো সাহায্য পাবে।’ এটা বলে চাল না দিয়ে উল্টো তার নামের ভিজিডি কার্ডটি কেড়ে নিয়ে কার্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেন চেয়ারম্যান নওশের।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নওশের চেয়ারম্যান একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আমি গরিব মানুষ। কাজ করে পেট চালাই। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করতে অস্বীকার করায় আমার স্ত্রীর নামের ভিজিডির চালের কার্ডটি নওশের চেয়ারম্যান কেড়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এটা কোন বিচার। আমি ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

এই অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওশের আলী দৈনিক  বলেন, ‘আমজাদ আওয়ামী লীগের সমর্থক হয়েও সে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করার কথা বলে বেড়াচ্ছে। সে কারণে আমি আমজাদকে গালিগালাজ করেছি কিন্তু তার স্ত্রীর ভিজিডির কার্ডটি কেড়ে নিয়েছি এ কথা সত্য না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার সুনাম নষ্টের জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনীন ফেরদৌস বলেন, ‘মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভিজিডির কার্যক্রমের নীতিমালা অনুযায়ী ভিজিডি চালের কার্ডটি ভুক্তভোগীর নিজস্ব সম্পদ, তাতে কারো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। কোনো চেয়ারম্যান যদি এমন কাজ করে থাকেন তাহলে কাজটি তিনি ঠিক করেননি।’

কুমারখালীর ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘ভিজিডির চাউলের কার্ড কেড়ে নেওয়ার এখতিয়ার কোনো চেয়ারম্যানের নেই। ওই গৃহবধূর কার্ডটি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ আমি পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে এই বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নওশের আলীসহ তিনজন ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। গত ২৯ এপ্রিল এ সংক্রান্তে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণ লুটের অভিযোগে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নওশের আলী। তিনি ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় সরকারি ত্রাণ ভুয়া মাস্টাররোল বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছেন।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ থেকে অপসারণের সুপারিশ করেছিলেন। চেয়ারম্যান ও সদস্যর সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। কাজেই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশে কেন তাদের চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাব পত্র পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।

এসএইচ-২২/২৬/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক, তথ্যসূত্র : আমাদের সময়)