‘ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল’

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর এজেন্টদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের এক ভোটকেন্দ্রে ৩টি বুথে ৪০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখেন প্রিজাইডিং অফিসার।

রোববার সকাল ১১টায় মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার মনারা বেগম বলেন, ‘নৌকার এজেন্টরা আমার কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছেন। আমি নিজে ভোট দিতে পারিনি।’ এ সময় অপর ভোটার হালিমা বেগমও একই অভিযোগ করেন।

দুপুর ১২টায় ওই কেন্দ্র থেকে খায়রুন নেছা ও রেহানা বেগম অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রতিবাদ করায় (নৌকার এজেন্টরা) ব্যালট ফিরিয়ে দিয়েছে। ওই কেন্দ্রে নারীদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। ভয়ে কেউ কিছু বলছে না।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আব্দুল কুদ্দুস স্বপনের (আনারস) প্রধান এজেন্ট আব্দুল বাছিত শামীম বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে কয়েকজন ভোটারের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি।’

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। জোরে নারী ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। আমি কারো কাছে কোনো সহায়তা পাচ্ছি না।’

তবে, মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শ্রীবাস রঞ্জন দাস বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। কেউ গুজব ছড়িয়েছে।’

দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাদিপুর ইউনিয়নের দারুস সুন্নাত হামিদিয়া আলীম মাদ্রাসার পুরুষ ভোটকেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা কার্ড ঝুলিয়ে ভোটারদের ডেকে নিয়ে যান। পরে গোপন কক্ষে না নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল দেন। এ সময় প্রিজাইডিং অফিসারকে ডেকে আনা হলে তিনি এমন চিত্র দেখে ১২টা ১১ মিনিটে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন। পরে ১২ টা ৫১ মিনিটে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

এর আগে প্রিজাইডিং অফিসারকে ভেতর থেকে নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. আজহার হোসেন ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হঠাৎ বহিরাগতরা বিশৃঙ্খলা শুরু করলে পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন নিরাপত্তার জন্য ভেতর থেকে বন্ধ রাখা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। বারবার সতর্ক করেও যখন কাজ হয়নি তখন ভোটগ্রহণ বন্ধ রেখেছি।’

বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ আসবে বলে তিনি জানালেও দুপুর সোয়া ১টা বাড়তি পুলিশ সেখানে আসেনি।

তৃতীয় ধাপে সোনারগাঁও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১০ ইউপিতে ভোটগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে বড়লেখা সদর ইউপিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। বাকি ৯টি ইউপিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। নির্বাচনে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৪ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এসএইচ-০৩/২৮/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)