‘জীবিত’ প্রমাণ করতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ‘শহীদ’ মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি সিলেটের এমসি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা দেখে ক্ষুব্ধ আবদুল হান্নান বসে থাকতে পারেননি। দেশ-মাতৃকাকে হানাদার মুক্ত করতে এপ্রিলের শেষের দিকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ চলে যান।

ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার সংগ্রামে যুক্ত হন। এক পর্যায়ে ধরা পড়েন পাকবাহিনীর হাতে। তবে প্রায় তিন সপ্তাহ পরে তিনি মুক্ত হন শত্রুসেনাদের হাত থেকে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার রাজাপুরের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল হান্নান।

আবদুল হান্নান এখনও বেঁচে আছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতিও আছে তার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নয়, তার স্থান হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হান্নান এখন নিজেকে জীবিত প্রমাণে ঘুরছে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেন। কিন্তু এখনও তিনি রয়ে গেছেন ‘শহীদ’ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই।

আবদুল হান্নান জানান, ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের একটি দলকে দেশে পাঠানো হয়। দেশে ফিরে শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁওয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন তিনি ও তার দলের মুক্তিযোদ্ধারা। কৌশলগত কারণে ফের ভারতে চলে যান তারা। নভেম্বরের দিকে ফের দেশে ফিরে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণের জন্য একটি ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু করেন তিনিসহ ছয় সদস্যের দল।

একপর্যায়ে দুই সহযোদ্ধাসহ তিনি ধরা পড়ে যান পাকবাহিনীর হাতে। মৌলভীবাজার জেলা সদরে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে বন্দি করে রাখা হয় তাদের। ২০ দিন নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাদেরকে। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে রেসকোর্স ময়দানে অস্ত্র জমা দেন আবদুল হান্নান। ১৯৭৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তহশিলদার পদে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে ২০০৯ সালে অবসরে যান। ২০১২ সালে তালিকায় নাম ওঠাতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি তথ্য-উপাত্ত ও কাগজপত্র দেখে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই তালিকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয়। একপর্যায়ে তিনি জানলেন, তালিকায় নাম ওঠাতে ই-মেইলে আবেদন করতে হবে। তিনি ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সরাসরি কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এর কিছুদিন পরই জানলেন তার নাম জীবিত মুক্তিযোদ্ধা নয়, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠেছে।

আবদুল হান্নান জানান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ছিফাত মিয়া ও দানু মিয়ার সাথে তার নাম পাঠানো হয়েছিল। তাই হয়তো ভুল করে তার নামও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকে আবদুল হান্নানকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ধর্ণা দিতে হচ্ছে।

এসএইচ-২৭/১৫/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)