হাত ধুয়ে, জেল মেখেও দিতে পারলেন না ভোট!

ভোট দিতে গিয়ে মিলছে না আঙুলের ছাপ। তারপর আনসার সদস্যের পরামর্শে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আবার আসেন, তাও মিলল না ছাপ। সবশেষ ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা আঙুলে জেল মেখে দেন। তাতেও কোনো লাভ হলো না। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আবার চেষ্টা করেও মিলল না আঙুলের ছাপ। অবশেষে ভোট না দিয়েই হতাশ হয়ে ফিরতে হলো বাড়িতে।

রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শহরের আদর্শ স্কুল নারী কেন্দ্রে এমনই এক ঘটনা ঘটল এক নারী ভোটারের সঙ্গে।

ওই ভোটারের নাম মনোয়ারা বেগম। তিনি বেলা সোয়া ১১টার দিকে কেন্দ্রে আসেন। ১৫ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন আঙুলের ছাপ দিতে গেলেন, তখন মিলছিল না। সব আঙুল দিয়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তাকে বলেন, ‘আপনি একটু পরে আসেন।’

ঘটনাস্থলে থাকা আনসার সদস্য নূর জাহানের পরামর্শে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসেন মনোয়ারা। আবার সব আঙুল দিয়ে চেষ্টা করেন। এই দফাতেও ভোট দিতে পারেননি তিনি। এরপর ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা মনোয়ারার আঙুলে জেল মেখে দেন। তাতেও কোনো লাভ হয়নি।

এ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা কিছুটা বিরক্ত হলে বুথের ভেতর পাশে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে মনোয়ারাকে অপেক্ষা করতে বলেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। কিছুক্ষণ পর আবারও চেষ্টা করলেন মনোয়ারা বেগম। ইভিএমের সঙ্গে তার আঙুলের ছাপ আর মেলেনি। হতাশ হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ভোট না দিয়েই বেরিয়ে যান মনোয়ারা।

ভোট দিতে না পারা মনোয়ারা বলেন, ‘কাজ করলে তো হাতের রেখা কিছুটা মুছে যায়। এখন আমার কী করার আছে? কষ্ট করে এসে ভোট দিতে পারলাম না।’

ওই কেন্দ্রে দেখা যায়, ‘সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন। নইলে আঙুলের ছাপ মিলবে না। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে’—ভোটারদের এমন কথা বলছিলেন আনসার সদস্য নূর জাহান। এমন কথা কেন বলছেন—খোঁজ নিতেই জানা গেল, বুথে অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলছে না। তাই এ ব্যবস্থা!

সকালে নগরীর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শীতের কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোটাররা নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত হন৷ কোনো ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিতে পেরেছেন বলে জানান বেশ কয়েকজন ভোটার।

২০১৬ সালে নাসিকে মোট ভোটার ছিল চার লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। সে অনুযায়ী নতুন ভোটার ৪২ হাজার ৯৩০ জন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে চলবে ভোটগ্রহণ। এ জন্য নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার ৯১২টি ইভিএম মেশিন আনা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯২টি কেন্দ্রের ৩০টি কেন্দ্র অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডের আটটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সব কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় রেখে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে‘ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে পাঁচজন অংশগ্রহণ করেছেন। তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাসুম বিল্লাহ, দেয়ালঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিশের এবিএম সিরাজুল মামুন, বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলনের জসিম উদ্দিন, হাতঘড়ি প্রতীকে কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস। বাকি দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন হাতি প্রতীকে। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু লড়ছেন ঘোড়া প্রতীকে।

সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৩৪ জন। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন। মোট ১৮৯ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজন মেয়র, ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে সাধারণ কাউন্সিলর বেছে নেবেন ভোটাররা।

এসএইচ-০৮/১৬/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)