হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসল নষ্ট: তদন্ত কমিটি গঠন

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বাঁধ ভেঙে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ হাওর এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। বাঁধ মেরামতসহ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযােগিতা করার কথা জানিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, বাঁধ ভেঙে ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাঁধ ভাঙার পেছনে গাফিলতি থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।

মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার হাওরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। সংবাদ সম্মেলনে উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বক্তব্য দেন।

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, সুনামগঞ্জ হাওরে মোট ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে এর মধ্যে ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের কাজ ড্রোনের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই ও মনিটরিং করা হয়েছে। সম্প্রতি বন্যায় হাওরের ৩টি স্থানে ১৭০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে, দুটি স্থানের বাঁধ মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য হাওরে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে। আগাম বন্যার জন্য সব সময় মনিটরিং ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে থাকে। হাওরের পানি জমে থাকায় ডিসেম্বরে সব জায়গায় কাজ শুরু করা যায়নি। ডিসেম্বরের স্থলে জানুয়ারিতে কাজ শুরু হলে বাঁধের কাজ শেষে ঘাস বপনের আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যায়। বাঁধের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

জাহিদ ফারুক বলেন, দেশে ৭টি জেলায় ৩৭৩টি হাওরের মধ্যে সুনামগঞ্জে সর্বাধিক হাওর রয়েছে। এ বছর জেলায় মোট ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল চাষ করা হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধে ১৩৬টি স্থানে সিপেজের সৃষ্টি হয়েছে; এর মধ্যে ৮৮টি সম্পূর্ণ মেরামত করা হয়েছে ৩৮টির কাজ চলমান রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী ৬৪টি জেলায় নদী খননের লক্ষ্যে ৫১১টি নদীর জায়গায় ৬২৭টি ছোট নদী/খাল খনন কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ জেলার জন্য ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকার ১৪ নদী খনন একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যার দৈর্ঘ ৩২৭ কিলোমিটার সংযুক্ত খাল ২৫০ কিলোমিটার। নভেম্বরে একনেকে পাস হলে ২০২৩ সালে কাজ শুরু হবে। ৯০টি কজওয়ে প্রকল্পও রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পক্রিয়াধীন। সুনামগঞ্জ হাওরের ১৪টি নদীতে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনন কাজ চলমান রয়েছে; ইতোমধ্যে ৫টি জেলার নদীর ৩৭৪ কিলোমিটার খনন চলমান। গ্রামবাসী বোরো ধান কাটা শেষ হলে কৃষকরা বাঁধ কেটে দেয় মাছ চাষের পানি প্রবেশের জন্য ফলে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ সময় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মানবতার মন্ত্রণালয়। মানবতার পাশে আছে এ মন্ত্রণালয়। আকস্মিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার লক্ষ্যে যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। আপৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং ১১টি টিম করা হয়েছে। বর্তমান সরকার তথা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমাতা বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে আগে বছরে ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি নদীগর্বে বিলিন হতো। এখন তা কমে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর নেমেছে। আমাদের যে দায়িত্ব তা পালনের চেষ্টা করছি। কারো কোনো গাফিলতি পেলে কোনো ক্ষমা নয়।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরিনের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য নগদ অর্থসহ কৃষিঋণ মওকুফে যা যা করা দরকার তা করা হবে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তা করা হবে বলেও জানান এনামুল হক শামীম।

এ সময় সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, হাওরের কোনো কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয় না। পিআইসি কমিটির মাধ্যমে কাজ করা হয়। ৭টি জেলায় হাওরে মোট ২ হাজার ৬১৮ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। ৭২৭টি পিআইসির মধ্যে ৪টি পিআইসির সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজ বাস্তবায়নের হার ৯৯ শতাংশ। কোথাও দেরিতে কাজ শুরু করা হয় না; পানি নেমে না গেলে কাজ করা যায় না। তবে কাজ সময়মতো শেষ হয়েছে। তাহিরপুরে একটি বাঁধ ভেঙে গেছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয় সেটি স্থানীয়ভাবে করা হয়েছে।

এসএইচ-৩০/১১/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)