১২ বছর পর বাবা-মাকে পেলেন গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার নারগিস

সাতক্ষীরায় বাবার বাড়িতে দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকতেন নারগিস। দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে ও কাজের কথা বলে তাকে ঢাকায় এক সরকারি কর্মকর্তার কাছে বিক্রি করেন প্রতিবেশী।

মিরপুরের বিজয় রাখিন সিটির নবম তলায় একটি ফ্লাটে নারগিসকে ১২ বছর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এক সময় ওই কর্মকর্তার বড় মেয়ের বিয়ের ভিড়ে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি। গত শনিবার (২৫ জুন) দীর্ঘ ১২ বছর পর শ্যামনগর উপজেলার গোদাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে পৌঁছান নারগিস। ফিরে পান সন্তান ও বাবা-মাকে। পরিবারও মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি হয়েছে।

তবে দীর্ঘদিন আটকিয়ে রাখা ওই গৃহকত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পারিশ্রমিকসহ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে দরিদ্র পরিবারটি।

নারগিস শ্যামনগর উপজেলার গোদাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আনছার শেখের মেয়ে।

জানা গেছে, বাল্যবিবাহের শিকার নারগিস স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দেড় বছরের ছেলে নাইমকে নিয়ে সাতক্ষীরার সর্বদক্ষিণে শ্যামনগর উপজেলায় বাবার বাড়িতে কষ্টের সঙ্গে দিনাতিপাত করতে থাকেন।

২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় সর্বস্ব হারিয়ে কাজের খোঁজ করতে থাকেন নারগিস। প্রতিবেশী আজিজ নামে একজন দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে ঢাকা মিরপুরে ড. মেহেদী হাসানের কাছে বিক্রি করে দেন নারগিসকে।

সোমবার দুপুরে ভুক্তভোগী নারগিস অভিযোগ করে জানান, গৃহকত্রী সৈয়দা নিপুন বাসার বাইরে যেতে দিতেন না। বাইরের লোকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তার ওপর চলতেন নির্যাতন। ছ্যাঁকা দেয়া হতো গরম খুঁনতির। দিনভর কাজের পরও তাকে পেটপুরে খেতে দেয়া হতো না। এভাবে ১২টি বছর তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলে।

নারগিসের বাবা আনছার শেখ বলেন, প্রতিবেশী আজিজের চক্রের সদস্য গফুর মেয়েকে ভারতে পাচার করেন। সেখানে বিএসএফ এর হাতে আটক হওয়ার তিন মাস পর পুশব্যাক করা হয়। পরে আজিজ তাকে ঢাকায় বিক্রি করেন। তার ছেলে সোলায়মানকে সম্প্রতি বাঘে খেয়েছে, মেয়েটাকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি এর সঠিক বিচার দাবি করেছেন।

নাগিসের মা হামিদা খাতুন বলেন, মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। নারগিসের ছেলে নানিকে মা ও নানাকে বাবা বলে ডাকতেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে ছেলে নাইম দীর্ঘ ১২ বছর পর মাকে পেয়ে বেশ খুশি। তবে তার মায়ের ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের বিচার চায় নাইম।

জেলা মহিলা পরিষদের নেত্রী আকলিমা খাতুন লিমা বলেন, বার বার পাচার চক্রের শিকার নারগিসকে যে নারী ১২ বছর আটকিয়ে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন; তার বিচারের সঙ্গে সঙ্গে যেন নারগিস পারিশ্রমিক বুঝে পান এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিচার দাবি করেছেন তিনি।

এদিকে নারী পাচার চক্রসহ ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্লাটে বসবাসরত ড. মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সৈয়দা নিপুনকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেছে সাতক্ষীরাবাসী।

এসএইচ-১৫/২৭/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)