কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। রয়েছে বিদেশি মুদ্রাসহ বেশ কিছু সোনা। শনিবার (২ জুলাই) মসজিদের আটটি বড় বড় লোহার দান সিন্দুক খোলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গণনা। সন্ধ্যার দিকে জানা যায় তিন মাস ২০ দিনে দর্শনার্থীদের দানের টাকার সংখ্যা।
নগদ টাকা ছাড়াও দানবাক্সে পাওয়া গেছে সোনা-রুপার গহনা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সকাল ৮টায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ঈদগাহ কমিটির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৮টি দানবাক্স খোলা হয়। এরপর ১৬টি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে সব টাকা ঢেলে গণনা শুরু করা হয়।
কিশোরগঞ্জ রুপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারী ও মসজিদ কমপ্লেক্স মাদরাসার ১৫০ জন শিক্ষার্থী সারা দিন টাকা ভাঁজ ও গোনার কাজে অংশ নেন। এর আগে গত ১২ মার্চ এসব দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
এরও আগে গত বছরের ৬ নভেম্বর এসব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। মসজিদটিতে মোট আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর এসব বাক্স খোলার রেওয়াজ রয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, কোনো এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝামাঝি প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী জায়গায় জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব ধর্ম-বর্ণের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পিরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশ-বিদেশের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। এ মসজিদে মানত কিংবা দান-খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।
নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে মসজিদটিতে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে।
মসজিদের বিপুল অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি। এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব অর্থ মসজিদ কমপ্লেক্স, মাদরাসা ও এতিমখানার উন্নয়নের পাশাপাশি অসহায়-দুস্থ, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের সেবা এমনকি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।
মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম শওকত আলম বলেন, খরচ বাদে বাকি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়। পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সকে ঘিরে এখানে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মসজিদ কমপ্লেক্স আরও দৃষ্টিনন্দন হবে। প্রায় একশ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মসজিদে ৬০ হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন।
এসএইচ-০৮/০২/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)