সুতার আড়ালে মদ আমদানির রহস্য উদ্‌ঘাটন

অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পলেস্টার সুতার আড়ালে ৫ কন্টেইনার মদ আমদানির পুরো রহস্য উন্মোচন করেছে কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এসব মদ আনার কাজে ব্যবহৃত দুটি জাহাজ শনাক্তের পাশাপাশি শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে বিদেশে টাকা পাচারের। আর পাচারচক্রের নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী চক্রকে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া চালানের মধ্যে চার কন্টেইনার মদ এইচ আর সারেরা জাহাজ এবং বাকি এক কন্টেইনার এমভি ইস্ট অ্যাওয়ে যমুনা করেই আনা হয়েছে। এইচ আর সারেরা জাহাজে করে আনা মদের চালানের শিপিং এজেন্ট রিচফিল্ড শিপিং এবং ইস্ট অ্যাওয়ে যমুনা জাহাজে আনা মদের শিপিং এজেন্ট বিটি শিপিং। এসব চালানের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।

শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক এ কে এম সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘একটা বিষয়ে আমরা পরিষ্কার যে এখানে মানি লন্ডারিং হয়েছে। এ ছাড়া কাদের দায়িত্বে অবহেলায় এমন হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।’

এর আগে মদের চালান আনার কাজে ব্যবহৃত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসাবে নগরীর গোসাইলডাঙা এলাকার জামাল আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালিকপক্ষ পলাতক রয়েছে। আর চার কন্টেইনার মদ এবং ১১ লাখ শলাকা সিগারেট আনার অভিযোগে অভিযুক্ত রিচফিল্ড শিপিংয়ের মালিকপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, পলিস্টার সুতার আড়ালে মদ আনার বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।

রিচফিল্ড শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস তাবরীজ বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে পণ্যপরিবহন। কন্টেইনারের মধ্যে কী আছে, আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব। এ ক্ষেত্রে কে আসল আমদানিকারক, কে নকল আমদানিকারক তা শনাক্তের দায়িত্ব আমাদের না।’

এদিকে মদ পাচার রহস্য উন্মোচনের পর পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে সুতার নামে মদ এনে বিদেশে টাকা পাচারকারী চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী পক্ষটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-পুলিশ-সিআইডি-পিবিআই-দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনের উপকমিশনার নূর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘আমাদের একটি সমন্বয় টাস্কফোর্স দরকার, যেখানে আলোচিত এ মামলাটি প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করা যায়।’

অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে এই ৫টি চালানে ১ লাখ বোতলের বেশি মদ ছিল। যার পরিমাণ ৬৩ হাজার ১২২ লিটার। সে সাথে জব্দ হয়েছে প্রায় ১১ লাখ শলাকা সিগারেট। আর ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসএইচ-০৬/০৩/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)