হাত নেই, পা দিয়ে ছবি এঁকে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পেল শিশু মুনায়েম

প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেল পা দিয়ে ছবি আঁকা ফেনীর ক্ষুদে শিল্পী মুনায়েম। গত ঈদুল ফিতরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ঈদের শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান পেয়েছে মুনায়েমের আঁকা ছবি। বঙ্গবন্ধু ও গ্রামবাংলাকে নিয়ে আঁকা ছবিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর কাড়ে। শিশুটিকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার ও আড়াই শতাংশ জমির ওপর একটি আধা পাকা টিনশেড বাড়ি উপহার হিসেবে নির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসনকে। এতে খুশি শিশুটির পরিবার, স্বজন ও স্থানীয়রা।

আবদুল্লাহ আল মুনায়েম। প্রায় একযুগ আগে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মিদ্দার হাটের কামাল উদ্দিন ও বিবি কুলসুমের সংসারে তার জন্ম। সংসারে প্রথম সন্তান জন্মের খবরে দম্পতিটি খুশি হলেও তা ম্লান হয়ে যায় জন্মের পর সন্তানের দুটি হাত নেই দেখে। দুই হাত না থাকলেও থেমে থাকেনি শিশু মুনায়েম। পা দিয়ে লেখা ও ছবি আঁকতে পারে সে। এখন এই ছেলেই গর্বিত করেছে তার পরিবারকে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার যেন কোনো শেষ নেই।

শিশু মুনায়েম বলে, খুব ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী আমার আঁকা ছবি দেখার পর আমাকে পুরস্কৃত করেছে। আমি যেন সামনে আরও এগিয়ে যেতে পারি সবাই দোয়া করবেন।

মুনায়েমের মামা বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আমরা তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করি।

আবদুল্লাহ বর্তমানে দাগনভূঞা একাডেমিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। আবদুল্লাহর ছোট ভাই একই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তবে আবদুল্লাহর এই সাফল্য দেখতে পারেননি তার বাবা কামাল উদ্দিন। তিন বছর আগে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ওমানে পাড়ি জমান কামাল। বছর দুয়েক আগে ওমানেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। স্বামীকে হারানোর পর কুলসুমের কাঁধে চাপে পুরো সংসারের দায়িত্ব।

মুনায়েমের মা বলেন, আমার ছেলের পড়ালেখায় এবং আঁকায় যত উৎসাহ রয়েছে অন্য কারো মধ্যে এত উৎসাহ দেখিনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ যে উনি আমার ছেলের আঁকা ছবি দেখে ঘর উপহার দিয়েছেন। আশাকরি ভবিষ্যতেও উনার ছায়া আমাদের ওপর থাকবে।

আবদুল্লাহর ছবি আঁকা শেখার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় আর্ট স্কুলের শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন। কোনো কিছুই আবদুল্লাহকে থামাতে পারেনি বলে জানান তিনি। খুশি সহপাঠীরাও।

তারা বলে, ওর আঁকা ছবিগুলো আমাদের অনেক ভালো লাগে। ও শুধুমাত্র পা দিয়ে অনেক সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শিশু মুনায়েমকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, একটি ছেলের দুটি হাত নেই। শুধু পা দিয়ে অঙ্কন করে। এটা জেনে প্রধানমন্ত্রী অনেক খুশি হয়েছেন। উনি পরিবারটিকে এক লাখ টাকা উপহার প্রদান করেছেন। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন তার জন্যে একটি ঘর যেন করে দেয়া হয়। এ জন্যে দাগনভূঞা পৌরসভায় ঘর করে দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি দাগনভূঞা পৌরসভার উদরাজপুর এলাকায় ওই বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর কাজের উদ্বোধন করেন ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান। অনুষ্ঠানে মুনায়েম পরিবারের জন্য কেনা জমির মূল্য বাবদ জমির মালিককে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার একটি চেক হস্তান্তর করা হয়।

এসএইচ-০৫/২০/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)