শত বছরের অন্ধকারের কাটিয়ে আলোকিত হচ্ছে হাতিয়া

শত বছর প্রতীক্ষার পর এবার আলোকিত হওয়ার পথে নোয়াখালীর সবুজ দ্বীপ হাতিয়া। সাত লাখ মানুষের এ দ্বীপে স্থাপন হয়েছে ১৫ মেগাওয়াটের হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচএফও) ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট। এরই মধ্যে প্রায় ৫১২ কিলোমিটার ৩৩/১১ ভোল্টের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষনাগাদ প্রকল্পের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসবে প্রতীক্ষায় থাকা দ্বীপবাসী।

জানা যায়, ৩০০ বছরের পুরনো নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। বঙ্গোপসাগর আর মেঘনার কোলে দোল খাওয়া এ দ্বীপের মানুষের অর্থনীতির চাকা ঘোরে মৎস্য, কৃষি আর পর্যটনে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হলেও শত শত বছর ধরে সেখানে অন্ধকারেই জীবন পার করছিল লাখ লাখ মানুষ। পূর্ব পাকিস্তান সময় ৫টি জেনারেটরের মাধ্যমে পৌর এলাকায় কিছুটা বিদ্যুৎ পেলেও নিরবচ্ছিন্ন ছিল না সেটিও। স্বাধীনতার এত বছরেও উন্নয়ন হয়নি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার।

এবার ১৫ মেগাওয়াটের হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচএফও)ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টের এ বিদ্যুতের আলোতে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি আলোকিত হবে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রথম বিদ্যুতের উন্নয়ন দেখতে যাচ্ছে দ্বীপবাসী। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে শুরু হয় নতুন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কাজ। এক বছরের মধ্যেই ১৬ একর জমিতে নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টের কাজ। এখন শুধুই আলোকিত হওয়ার প্রতীক্ষা। আলোয় শুধু আলোকিত নয়, বিদ্যুৎ সুবিধা পেলে বদলে যাবে দ্বীপের শত শত বছরের অন্ধকারের গল্প। স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এমন খবরে উচ্ছ্বসিত দ্বীপের মানুষ।

৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের নাম ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’। এরইমধ্যে দ্বীপের মূল ভূখণ্ডের ৯টি ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ৫১২ কিলোমিটার ৩৩/১১ ভোল্টের সঞ্চালন লাইন। মূল ভূখণ্ড থেকে দেড় কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপেও দেয়া হয়েছে সঞ্চালন লাইন। দেশ এনার্জি উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এর মধ্য দিয়ে দ্বীপ হাতিয়ার অর্থনীতি আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, বিদ্যুতের লাইন সঞ্চালনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস জানান, সরকারের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষি ও মৎস্যনির্ভর এ দ্বীপে স্থাপন হবে নতুন নতুন কলকারখানা। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া যেমন লাগবে, তেমনি দ্বীপে প্রযুক্তিগত সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে।

এসএইচ-০৬/১৬/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)