বান্ধবীর সংসার জোড়া লাগাতে গিয়ে হলেন সতিন

এক নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ভেঙে যাওয়া বিয়ে জোড়া লাগাতে চেষ্টা করছিলেন ওই নারীর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তা সফল হয়েছে। তবে এ দুজনের বিয়ের সঙ্গে আরেকটি বিয়েও হয়েছে একই দিনে। সেই বিয়ের পাত্র এই স্বামীই আর পাত্রী ওই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। অর্থাৎ দুই বান্ধবীর স্বামী এখন একজনই।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ছাতীয়ান গ্রামে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পৃথক কাজি আফিসে গিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে বিয়ে করেছেন এ দুই বান্ধবী। তারা একজনের বিয়েতে আরেকজন সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দুটি বিয়েরই দেনমোহর হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।

পাত্র ৩২ বছর বয়সী প্রবাসী মিজানুর রহমান একই উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের ছাতীয়ান গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে। আর দুই পাত্রী হলেন উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের নিশিপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে ২১ বছর বয়সী আছিয়া খাতুন ও একই এলাকার রুহুল আমিনের ২১ বছর বয়সী মেয়ে সাথী আক্তার।

আছিয়া ও সাথীর বাড়ি পাশাপাশি, বেড়েও উঠেছেন একসঙ্গে। তারা বাল্যবন্ধু। তাদের বিয়ের খবর জানাজানি হয় সম্প্রতি। এ নিয়ে চলছে উপজেলাজুড়ে আলোচনা।

দুই বান্ধবীর সঙ্গে একজনের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বামন্দী ইউপি নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) খাদেমুল ইসলাম ও মটমুড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) মন্জুর আহমেদ।

দুই পরিবার সূত্রে জানা যায়, আছিয়া খাতুনের সঙ্গে গত ১৫ জানুয়ারি মিজানুর রহমানের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। তবে মনোমালিন্য হওয়ায় বিয়ের তিন মাসের মধ্যে পরিবারের সম্মতিতে তাদের তালাক হয়ে যায়।

এ ঘটনার কয়েক মাস পর মিজানুর ও আছিয়ার যোগাযোগ হয় আবার। এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সাথী। একপর্যায়ে মিজানুর ও আছিয়া নতুন করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে ভালোলাগার সম্পর্ক হয় মিজানুরের সঙ্গে সাথীর। পরে দুই বান্ধবী মিলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মিজানুর দুজনকেই বিয়ে করেন।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি আছিয়াকে খুব ভালোবাসি। আছিয়ার সঙ্গে আবার সংসার করতে চাইলে সে ও সাথী মিলে আমাকে প্রস্তাব দেয় তাদের দুই বান্ধবীকেই বিয়ে করতে হবে। সেই মোতাবেক আমি গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার টাকা নগদ দেনমোহরে দুই কাজি অফিসে গিয়ে প্রথমে আছিয়াকে ও পরে সাথীকে বিয়ে করি।’

তিনি বলেন, ‘আয়েশার বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থেকেছে সাথী আর সাথীর বিয়ের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থেকেছে আছিয়া। আমরা তিনজনই কাজি অফিসে তথ্য গোপন করে বিয়ে করি। বিয়ের দিন বিকেলে দুজনই একসঙ্গে স্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে আমার বাড়িতে অবস্থান করে। এর এক দিন পর দুজনই আবার নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। বতর্মানে আমার দুই স্ত্রী তাদের মায়ের বাড়িতে অবস্থান করছে।’

আছিয়া ও সাথী জানান, তারা দুই বান্ধবী ছোটবেলা থেকে বোনের মত বড় হয়েছেন। এক স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চান।

আছিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আছিয়া ও মিজান দুজনে বিয়ে করবে বলে আমাকে জানিয়েছিল। আমি তাতে সর্মথনও দিয়েছিলাম। মিজানকে একজনের সঙ্গে সংসার করতে হবে, তা আছিয়া হোক অথবা সাথী।’

সাথী আক্তারের মা বলেন, ‘তাই মিজানকে যেকোনো একজনের সঙ্গে সংসার করতে হবে।’

আছিয়া ও সাথী আক্তারের ওয়ার্ড নিশিপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহ আলম  জানান, ‘এ দুই বান্ধবী এখন আলোচনার শীর্ষে। দুই বান্ধবীর পরিবার এই বিয়ে মেনে নিতে নারাজ। দুই পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের সিদ্ধান্ত যেকোনো একজনের সঙ্গে মিজানকে সংসার করতে হবে।’

এসএইচ-০৫/০৮/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)