কাফন চুরি, নগ্ন কবিরাজ আতঙ্কে এলাকাবাসী

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কাফনের কাপড় চুরির অভিযোগ উঠেছে উজির আলী বিশ্বাস নামে এক কবিরাজের বিরুদ্ধে। ওই কবিরাজ কাফনের কাপড় পরে গভীর রাতে গ্রামে ঘোরাফেরা করছেন। এ ঘটনায় গ্রামের সাধারণ মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।

সদ্য দাফন করা এক নারীর কবর থেকে কাফনের কাপড় চুরি হয়েছে। সেই কাফনের কাপড় পরিধান করে কবিরাজ উজির আলী বিশ্বাস (৫০) গভীর রাতে এলাকায় ঘোরাফেরা করায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানা যায়। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সোমবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের বড় ভালুকা গ্রামের দাসপাড়ায় ঘটেছে। অভিযুক্ত ওই কবিরাজ কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের মৃত জনাব আলী বিশ্বাসের ছেলে। এলাকায় নগ্ন কবিরাজ নামেই পরিচিত তিনি।

দাফন করা ওই নারীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘নগ্ন কবিরাজই কবর থেকে কাফনের কাপড় চুরি করেছে। ওই কাপড় জড়িয়ে গভীর রাতে এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। মানুষ ভয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এ জঘন্য কাজের জন্য কবিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

মঙ্গলবার এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) বড় ভালুকা গ্রামের ভ্যানচালক সামছুল মণ্ডলের মেয়ে ইতি খাতুনকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে তার স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোকজন। ময়নাতদন্তের পর রোববার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বড় ভালুকা কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। দাফনের পরদিন সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকালে কবরস্থানে যান নিহতের বাবা সামছুল মণ্ডল। কবরস্থানে গিয়ে দূর থেকে দেখেন মেয়ের কবরের বাঁশের ঘেরা ও চাটাই খোলা রয়েছে। কবরের কাছে গিয়ে দেখেন কাফনের কাপড় নেই। উলঙ্গ অবস্থায় মরদেহটি উপুড় হয়ে আছে। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসী মরদেহটি পুনরায় দাফন করেন।

একই দিন গভীর রাতে নগ্ন কবিরাজ সাদা কাপড় ও লাল গামছা পরে হাতে মোমবাতি নিয়ে বড় ভালুকা গ্রামের দাসপাড়ায় ঘোরাফেরা করেন। এতে ওই এলাকার মানুষ ভয় পায়। লক্ষণ দাস নামে এক যুবক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, নগ্ন কবিরাজ প্রায় সাদা কাপড় পরে এলাকায় গভীর রাতে ঘোরাফেরা করেন। শ্মশানঘাট ও কবরস্থানে মোমবাতি জ্বালিয়ে ধ্যান করেন। কবিরাজের এ ধরনের কাজের জন্য সবাই আতঙ্কিত।

এ বিষয়ে ইতির বাবা সামছুল মণ্ডল বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় মেয়েকে দাফন করেছি। সোমবার সকালে এসে এ দৃশ্য দেখি। পরে পুলিশকে জানিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে কথা বলে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী মিলে পরিষ্কার লাল কাপড় দিয়ে পুনরায় মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। নগ্ন কবিরাজ ছাড়া এ কাজ কেউ করতে পারে না। প্রায় ১৩ বছর আগে একই কবরস্থানে আমার ভাতিজির কবরেও গভীর রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসেছিল সে।’

বড় ভালুকা কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে কবরস্থানে এসে দেখি লাশের শরীরে কাপড় নেই। পরে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এ কাজ যে করেছে তার বিচার চাই।’

পানটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন বলেন, যেটা ঘটেছে সেটা খুব বাজে রকমের কাজ হয়েছে। ওই কবিরাজকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়া হয়েছিল। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অভিযোগ অস্বীকার করে উজির আলী ওরফে ‘নগ্ন কবিরাজ’ বলেন, ‘কার্তিক মাসের প্রথম দিবাগত রাত কবিরাজদের জন্য বিশেষ। তাই সাদা কাপড় ও লাল গামছা পরে ঘুরে বেড়িয়েছি। প্রায় এমন চলাফেরা করি। তবে কবর থেকে কোনো কাপড় নিইনি।’

এ বিষয়ে জানতে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন হোসাইনকে মোবাইল ফোনে কল দেয়া হয়। তিনি কল রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘কাফনের কাপড় চুরির খবর পেয়েছি। সবাই লালন উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেবে।’

এসএইচ-০৮/১৮/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)