দেশে ফিরছে দালালের খপ্পরে নিঃস্ব যুবকরা

দালালের খপ্পরে পড়ে ওয়ার্কিং ভিসার পরিবর্তে ভিজিট ভিসায় বিদেশে গিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজবাড়ীর শত শত যুবক। কাজ না পেয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন। দালালদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে অভিযোগ পেলে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ভুক্তভোগী যুবক রাজবাড়ী সদরের আলীপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি নিকবার শেখ জানান, কাজের সন্ধানে ওয়ার্কিং ভিসায় দুবাই যেতে ধার দেনা করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। তবে দালাল ওয়ার্কিং ভিসার পরিবর্তে চলতি বছরের মে মাসে ভিজিট ভিসায় দুবাই পাঠায় তাকে। সেখানে গেলে তাকে কোনো কাজ দেয়া হয়নি। কাজ দেয়ার কথা বললে দালালরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। অমানবিক দুঃখ-দুর্দশায় কোনোভাবে ৩৬ দিন পার করে বাড়ি থেকে বিমান ভাড়ার টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। এখন পাওনাদারের চাপে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

আরেক ভুক্তভোগী একই এলাকার মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘ব্রুনাই নেয়ার কথা বলে দালাল আমার কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়। আমাকে দুই বছর ঘুরিয়ে ব্রুনাই পাঠাতে পারেনি। পরে দালাল বলে, দুবাইয়ের ভালো ভিসা আছে। খুব ভালো কোম্পানির কাজ। তোমাকে দুবাই পাঠিয়ে দেই। আমিও তার কথায় বিশ্বাস করে দুবাই যাই। এয়ারপোর্টে নামার পর একটি লোক এসে আমাকে নিয়ে একটি ঘরে এক সপ্তাহ আটকে রাখে। সেখানে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এক সপ্তাহ পর এসে আমাকে নিয়ে একটি কোম্পানিতে দিয়ে আসা হয়।

সে কোম্পানি আমাকে রাখেনি। পরে আমি পালিয়ে দুবাইতে আমার কিছু আত্মীয়-স্বজনের কাছে চলে যাই। তাদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে চেয়ে আমাকে খাবার খেতে হয়েছে। এমনও হয়েছে দিনের পর দিন না খেয়েও থেকেছি। এভাবে আমি এক বছর দুবাইতে ছিলাম। দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি বাড়ি থেকে বিমান ভাড়ার টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসি। এখন সুদের টাকার জন্য পাওনাদাররা বাড়ি আসে। পাওনাদের চাপে আমার মা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। আমিও ঠিক মতো বাড়ি থাকতে পারছি না।

শুধু নিকবার ও ইউসুফ নয়, প্রবাসী জীবনের মুখরোচক গল্প শুনে দালালের খপ্পরে পড়ে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে এভাবে নিঃস্ব হয়েছেন রাজবাড়ীর শত শত যুবক। ভিসার ধরণ পরিবর্তন করে ভালো কাজ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে প্রথমে ভিজিট ভিসায় যুবকদের বিদেশ পাঠায় দালাল চক্র। পরে তাদের কাজ না দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরানো হয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিঃস্ব হাতে দেশে ফিরে আসতে হয় তাদের।

প্রবাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন রাজবাড়ী সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি প্রফেসর মো. নুরুজ্জামান।

তিনি বলেন, যুবকরা যে এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ যাচ্ছে সে এজেন্সি এবং ভিসা সম্পর্কে আগে থেকে ভালোভাবে খোঁজ খবর নিবে। এছাড়া এজেন্সি তাদের বিদেশে নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে, অনলাইনে সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও জেনে নেয়া যেতে পারে। কারণ এখন অনলাইনের যুগ। ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যে কোনো বিষয়ে খোঁজ নেয়া যায়। এভাবে যদি তারা সচেতন হয়। তাহলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।

প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে যাদের সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকার কথা সে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কোনো কার্যালয় নেই রাজবাড়ীতে।

তবে প্রবাসীদের যে কোনো সমস্যায় অভিযোগ পেলে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ শাখার সহকারী কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবু।

তিনি বলেন, সমস্যার কথা উল্লেখ করে আমাদের কাছে কেউ যদি লিখিতভাবে, ফোনে অথবা ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করেন আমরা সার্বক্ষণিক তার পাশে থাকবো। প্রথমে আমরা নিজেরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। যদি না পারি সেক্ষেত্রে আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কথা বলে যেভাবে সহযোগিতা করার দরকার সে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাটা করবো।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার ১১ হাজারেরও বেশি যুবক কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছেন বিভিন্ন দেশে।

এসএইচ-১৬/১৮/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)