দুই ভার্সিটি ছাত্রের কোরআন ভাবনা

দুই ভার্সিটি ছাত্রের

আল্লাহতায়ালা নাজিল করেছেন বিজ্ঞানময় কোরআন। পবিত্র কোরআনে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। বান্দাকে আল্লাহ যে সীমাবদ্ধ জ্ঞান দান করেছেন তার যথাযথ বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে মহাজ্ঞানী আল্লাহর অসীম জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে এ কোরআনে।

কোরআন পড়ে যেন প্রকৃত সত্যের সন্ধান খুঁজে পায় মানুষ। আল্লাহ বলেন, আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব। যেন মানুষ এর আয়াতগুলো গভীরভাবে চিন্তা করে, বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ, আয়াত ২৯)।

বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি কোরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করা মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক। কোরআন বুঝে কোরআনের আলোয় জীবনকে আলোকিত করার জন্যই কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআনি জ্ঞান সম্পর্কে আমাদের তরুণদের কতটুকু ধারণা সে সম্পর্কে কথা বলছিলাম দু’জন ভার্সিটি ছাত্রের সঙ্গে। আজকের লেখায় সে বিষয় তুলে ধরছি-

মোহাইমিনুল শান্ত-

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। জানতে চেয়েছিলাম কোরআন সম্পর্কে কতটুকু জানেন- উত্তরে তিনি বলেন, ছোটবেলা মক্তবে কিছুটা কোরআন পড়া শিখেছি। এখন আর মোটেও পড়া হয় না।

কোরআন বুঝতে হবে কোরআন পড়তে হবে সে ব্যাপারে ফ্যামিলির পক্ষ থেকে কখনও কোনো চাপ ছিল না। যেমন ধরুন বাবা-মা প্রতিদিন পড়ালেখার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হলে পরিবারের কাছ থেকে একটি চাপ আসে। কিন্তু আমার মতো অনেকেই এমন রয়েছে যাদের পরিবার থেকে ধর্মীয় বিষয়ে জানার চাপ দেয়া হয় না।

জানতে চেয়েছিলাম বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কোরআন শিখার ব্যাপারে অনাগ্রহী কেন? উত্তরে তিনি বলেন, কোরআনকে চিন্তা গবেষণা করে পড়ার জন্য মক্তবে মসজিদে তেমন কোনো উৎসাহ দেয়া হয় না। আমরা কোরআন পড়ি শুধু মারা গেলে বেহেশত পাওয়ার জন্য, তেলাওয়াত করলেই নাকি সোয়াব। যদি জানতাম কোরআনকে জীবন চলার পাথেয় করতে হয় তা হলে ছোটবেলা থেকেই কোরআন চর্চা করে আজ অনেক বড় পথের সন্ধান পেতাম।

সাব্বির হোসেন-

নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র। জানতে চেয়েছিলাম কোরআন না জানার কারণে আমাদের জীবনের কী ক্ষতি হচ্ছে। উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। আল কোরআনে প্রতিটি বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও আজও আমরা মুসলিমরা কোরআন শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে পারছি না, যতটা আধুনিক শিক্ষাকে দিচ্ছি।

যার ফলে সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কোরআনের জ্ঞান। কোরআন এসেছে মানুষকে আলোর পথ দেখাতে কিন্তু আজ আমরা শুধু আধুনিক শিক্ষা নিয়ে অচেতন অবস্থায় কোরআনকে অবহেলা করছি। এর জন্য দায়ী আলেম সমাজ। তারা কোরআন জানার গুরুত্ব বোঝায় না। তিনি আরও বলেন, আলহামদুলিল্লাহ ভার্সিটিতে আমাদের অনেক ভাই কোরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে যাচ্ছেন, কোরআন বুঝার চর্চা করছেন।

ভার্সিটিগুলোকে কোরআন শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। তখন গোটা জাতি এবং জাতীয় জীবন আলোকিত হবে। বিশ্ব আলো পাবে মুসলমানকে দেখে। আজকের মানুষ আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বসবাস করছে। পুরো পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয়। পলকেই তারা দেখে ফেলে বিশ্ব। চার পাশের ঘটে যাওয়া কত ঘটনা তারা দেখে ফেলে মুহূর্তে। ইন্টারনেট ঘেঁটে বুঁদ হয়ে থাকে জ্ঞানের রাজ্যে। প্রতিদিন নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কারের এ কথা ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ কোরআনে বর্ণনা করেছেন।

প্রযুক্তিময় সময়ে কোরআন আমাদের ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। কেউ কি পড়ে দেখেছেন কোরআন কত আগে কত রহস্যময় কথা বলেছে? অজানা আসমান এবং রুহের জন্য জগৎ নিয়ে গবেষণার এখন প্রযুক্তিতময় সময় এসেছে। আসুন কোরআন অধ্যয়ন করি। এই রমজান থেকেই জীবনকে প্রযুক্তিময় করে গড়ে তুলি।

আরএম-০৭/১২/০৫ (ধর্ম ডেস্ক)