তাওয়াফের কিছু ভুলত্রুটি

তাওয়াফের কিছু

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি কাবা ঘরে ঢুকে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতাম। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার হাত ধরে হিজরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, যদি কাবাঘরে ঢুকতে চাও তবে হিজরে সালাত আদায় কর। কারণ এটি কাবারই অংশ।’ (জাহেলি যুগে) কাবাঘর নির্মাণের সময় তোমার গোত্র (কোরাইশরা) একে ছোট করে ফেলেছে। তারা তা কাবার ঘর থেকে বাইরে রেখেছে।’ (বোখারি : ১৫৮৬)

১. তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য আলাদা বিশেষ দোয়া পড়া, শুধু দুই রুকনের মাঝখানে ছাড়া অন্য কোথাও নবী (সা.) থেকে বিশেষ কোনো দোয়া বর্ণিত নেই। তবে উত্তম হচ্ছে, কোরআন ও হাদিসে যেসব মৌলিক দোয়া এসেছে সেগুলো বলে দোয়া করা। তেমনি নিজের ভাষায় দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ কামনায় যে কোনো পছন্দনীয় বিষয় প্রার্থনা করা।

২. তাওয়াফের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা। যেমন এরূপ বলা : আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লি, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নি, সাবাআ’তা আশ্ওয়াত্বিন লিল্লাহি তায়া’লা।

স্মর্তব্য যে, কোনো ইবাদাতে নিয়ত উচ্চারণের কোন নিয়ম নেই। একমাত্র হজ বা ওমরা শুরু করার সময় প্রথমবার ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’ বা ‘লাব্বাইকা উমরাতান’ কিংবা ‘লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া উমরাতান’ উচ্চারণ করে নিয়ত করার ব্যাপারটি হাদিসে এসেছে; অন্য কোথাও নয়।

৩. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে গিয়ে ভিড় বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেওয়া। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা সুন্নত। পক্ষান্তরে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আর কোনো মুসলমানের জন্য সুন্নত আদায় করতে গিয়ে হারামে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়। তাই সহজে চুম্বন করা সম্ভব হলে করবেন, নয়তো ডান হাতে ইশারা করে তাকবির দিয়ে তাওয়াফ পুরো করবেন।

৪. কাবাঘরের পর্দা বা মাকামে ইবরাহিম স্পর্শ করাকে তাওয়াফের অংশ মনে করা এবং এর জন্য নির্দিষ্ট দোয়া পড়া। এ কাজ শরিয়তসম্মত নয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন করেছেন বলে প্রমাণ নেই। সাহাবিরা কেউ করেছেন বলেও নজির নেই। কাজটি যদি উত্তম হতো, তাহলে তারা আমাদের আগে অবশ্যই এসব করতেন। রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করার পর হাত চুম্বন করা অথবা সরাসরি রুকনে ইয়ামানিকে চুম্বন করা সুন্নাহর পরিপন্থি। রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করা সম্ভব না হলে এর দিকে ইশারা করা ও তাকবির দেওয়া শরিয়তসম্মত নয়।

সুতরাং রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদ ছাড়া বাইতুল্লাহর আর কিছুই স্পর্শ করবেন না। নবী (সা.) এ দুটি ছাড়া অন্য কিছু স্পর্শ করেননি। ইবনে আব্বাস (রা.) মুয়াবিয়া (রা.) এর সঙ্গে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। মুয়াবিয়া (রা.) বাইতুল্লাহর সব রুকন অর্থাৎ সব কোণ স্পর্শ করলে ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে বললেন, ‘আপনি সব রুকন স্পর্শ করছেন কেন?

রাসুলুল্লাহ (সা.) তো সব রুকন স্পর্শ করেননি?’ মুয়াবিয়া (রা.) বললেন, ‘কাবার কিছুই পরিত্যাগ করার মতো নয়।’ একথা শুনে ইবনে আব্বাস (রা.) তেলাওয়াত করলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ মুয়াবিয়া (রা.) তার কথা মেনে নিয়ে বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন’। (মুসনাদে আহমদ : ১৮৭৭)।

৫. অনেকে মনে করেন তাওয়াফের দুই রাকাত সালাত মাকামে ইবরাহিমের পেছনেই পড়তে হবে। মনে রাখবেন, সেখানে সহজেই আদায় করা সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো জায়গায় এমনকি হারামের বাইরে পড়লেও হয়ে যাবে। ওমর (রা.) ও অন্য সাহাবিরাও এমন করেছেন। (বোখারি : হজ অধ্যায়)।

৬. তাওয়াফের সময় মহিলাদের চেহারার আবরণ খোলা রাখা এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করা। এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কাজ। এমন পবিত্র জায়গায় ও মহান ইবাদতের সময় আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন কীভাবে করা সম্ভব?

৭. তাওয়াফের সময় কাবাকে বাঁয়ে না রাখা। তা যে কারণেই হোক না কেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজ শিখে নাও।’ (মুসলিম : ১২৯৭)। সুতরাং তাওয়াফ সহিহ হওয়ার জন্য কাবাকে বাঁয়ে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

৮. হিজরে অর্থাৎ কাবাঘর সংলগ্ন ঘের দেওয়া স্থানে তাওয়াফ করলে তা সহিহ হবে না, কারণ তা কাবাঘরেরই অংশ। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি কাবা ঘরে ঢুকে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতাম। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার হাত ধরে হিজরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যদি কাবাঘরে ঢুকতে চাও তবে হিজরে সালাত আদায় কর।

কারণ এটি কাবারই অংশ। (জাহেলি যুগে) কাবাঘর নির্মাণের সময় তোমার গোত্র (কোরাইশরা) একে ছোট করে ফেলেছে। তারা তা কাবার ঘর থেকে বাইরে রেখেছে।’ (বোখারি : ১৫৮৬)।

৯. ইহরাম বাঁধার পর থেকে হজের সমাপ্তি পর্যন্ত ইজতিবা করতে হয় বলে যে কিছু লোক ধারণা করে, তা ঠিক নয়। অনেকে আবার সালাত আদায়ের সময় ইজতিবা করেন, তাও সঠিক নয়। কেননা সালাত আদায়ের সময় কাঁধ ঢেকে রাখাই নিয়ম।

আরএম-০১/১৯/০৭ (ধর্ম ডেস্ক)