জান্নাত ও রিজিক লাভে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা

জান্নাত

মানুষের মধ্যে গরিব ও অসহায়রাই বেশি জান্নাতি। আবার অন্যদের জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায় এ গরিবরাই। জাহান্নামিদের অধিকাংশই ধন-সম্পদশালী, ক্ষমতাশালী ও নারীদের মধ্যে থেকে হবে। তবে ধন-সম্পদের মালিক হওয়া, ক্ষমতাশালী হওয়া কিংবা নারীর নারিত্বকে জাহান্নামি হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়নি।

ধনী কিংবা ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি গরিব মানুষকে তার ন্যায্য প্রাপ্য জাকাত ও দান-সাদকা দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের পরকালকে নিরাপদ ও শংকামুক্ত করবে। দুনিয়ায় নিজেরা পাবে উত্তম রিজিক আর তাদের দেয়া অর্থে গরিবদেরও রিজিকের ব্যবস্থা হবে।

পরকালের নাজাতের চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধে আগ্রহী হয়েই মানুষ গরিব-অসহায়দের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তাই তো কুরআনুল কারিমে গরিব ও অসহায় মানুষকে দানের ব্যাপারে দেয়া হয়েছে অনেক দিকনির্দেশনা। তাহলো-

> কাউকে ঋণ মুক্তি কিংবা দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আমি কি তাকে দেইনি দুটি চোখ, জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট। বস্তুত আমি তাকে দুটি পথ দেখিয়েছি। এরপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি। অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান- ইয়াতিম আত্মীয়কে অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকিনকে। তারপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও দয়ার। তারাই সৌভাগ্যশালী। (সুরা বালাদ : আয়াত ৮-১৮)

> পরকালের মুক্তিতে গরিবদের দান করা আবশ্যক করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কেয়ামতের দিনের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমস্ত নবি-রাসুলগণের ওপর। সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৭)

> গরিব অসহায়দের দানের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। যদি খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের খুব খবর রাখেন। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭১)

> মানুষের সর্বোত্তম দান হলো গবিরকে সহযোগিতা করা। আল্লাহ বলেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজ উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উত্তম বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে মন্দ (বস্তু) জিনিস ব্যয় করার ইচ্ছা করো না, কেননা তা (মন্দ বস্তু) তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না। তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখ, আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৭)

> হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোসণা করেন-

‘দুর্বল, অসহায় ও নিঃস্বদের ওছিলাতেই সচ্ছল মানুষরা সাহায্য ও রিজিকপ্রাপ্ত হয়।’

> অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন-

‘জাহান্নাম থেকে বাঁচ, একটি খেজুরের অর্ধেক দিয়ে হলেও।’

কুরআন ও হাদিসের আলোচনায় যেমনি ভাবে সম্পদশালীকে গরিবের প্রতি ইহসান করার কথা বলা হয়েছে। পরিণামে তারা পাবে মহা পুরস্কার। তেমনি অসহায় ও নিঃস্বদের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা ও সম্মানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

যে সম্মান ও মর্যাদার কারণেই আল্লাহ তাআলা তাদের মাধ্যমে সম্পদশালীকে দান করবেন জান্নাত ও পরকালীন মুক্তি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদশালীকে গরিবের প্রতি সদয়বান হওয়ার তাওফিক দান করুন। ধনী-গরিব সবাইকে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে দুনিয়ায় উত্তম রিজিক ও পরকালের মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরএম-২৪/০৫/১১ (ধর্ম ডেস্ক)