দোয়া কবুল না হওয়ার ১০ কারণ

হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি একজন সুফি সাধক ব্যক্তি ছিলেন। ক্ষমতা ও সম্পদে প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন। নিরহংকার জীবনে তিনি গোনাহমুক্ত জীবনের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট ছিলেন।

একদিন বসরা শহরের একটি বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ইবরাহিম ইবনে আদহাম । লোকজন তাকে দেখে ঘিরে ধরল। আর জিজ্ঞেস করল ­- হে আউলিয়া, হে পরহেজগার, আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রার্থনা করি, এর পরও আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না। দোয়া কবুলের উপায় বাতলে দিন।

তখন ইবরাহিম ইবনে আদহাম বলেন, ওহে বসরার অধিবাসী, ১০টি বিষয়ে তোমাদের অন্তর মরে গেছে :

১. তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অবগত, কিন্তু তার প্রদত্ত কর্তব্যসমূহ পালন করো না।

২. তোমরা দাবি করো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসো, কিন্তু তার সুন্নাহকে পরিত্যাগ করে থাকো।

৩. তোমরা কোরআন পড়ো, কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করো না।

৪. তোমরা নিজেদের শয়তানের শত্রু হিসেবে দাবি করো, কিন্তু তোমরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থাকো।

৫. তোমরা জান্নাতে যেতে উদগ্রীব, কিন্তু তার জন্য পরিশ্রম করো না।

৬. তোমরা জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কিত, কিন্তু পাপের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তার নিকটবর্তী হচ্ছ।

৭. তোমরা স্বীকার করো যে মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো না।

৮. ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকে তোমরা সর্বদা অন্যের দোষ বের করতে সচেষ্ট, কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে উদাসীন।

৯. তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ উপভোগ করো, কিন্তু তার জন্য শুকরিয়া আদায় করো না।

১০. তোমরা মৃতদেহের দাফন সম্পন্ন করার পর তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো না। ’

(হিইয়াতুল আউলিয়া : ৮/১৫, ১৬)

বোঝাই যাচ্ছে এই ১০ বিষয়ে নিজের অন্তরকে জাগ্রতকারীর দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সূরা মুমিন, আয়াত ৬০। ) আরবি দোয়া শব্দের অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা, কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদি।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯। ) দোয়া সব ইবাদতের মূল।

হাদিস বলছে, দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপার্জনকারীর দোয়া কবুল হয় না।

এ ছাড়া যারা কোনো কিছু না পেলে নিরাশ হয়ে যায়, হতাশায় ভোগে, যারা সৎ কাজের আদেশ দেয় না, অসৎ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে না এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করে না – এসব ব্যক্তিদের দোয়া কবুল হয় না।

এছাড়া দোয়ায় পূর্ণ মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া কবুল হয় না।

রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর দোয়াও কবুল হয় না।

এসএ-০৯/১০/০৬(ধর্ম ও দর্শন ডেস্ক)