সিরাজগঞ্জে বন্যা, খাদ্য ও ওষুধসহ নানা সংকট
খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধসহ নানা সংকটে ভুগছে কর্মহীন বানভাসিরা। সরকারিভাবে পরিবার প্রতি দশ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য। জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষই ত্রান সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিতরা দুর্বিসহ অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
বসতভিটাগুলো তিন থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে রয়েছে। কিছু কিছু পরিবার উচু জায়গা না পেয়ে পানির মধ্যেই চৌকিগুলো উচু করে থাকছে। অনেকে নৌকার উপর পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। আবার অনেকে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দুটি টিন, পলিথিন বা চট দিয়ে ঝুপড়ি তুলে মানবেতরভাবে বসবাস করছে।
বন্যাকবলিতরা বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে। পানিবাহিত ডায়রিয়া, হাত-পায়ে ঘাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরা শুকনো খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে। টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় নারীরা সবচেয়ে দুর্ভোগে ভুগছে। গবাদি পশুকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারছে না। সবমিলিয়ে দুর্ভোগে ঘূর্নিপাকে পড়ে অসহায়ত্বেও মধ্যে দিনকাটছে বন্যা কবলিতদের।
এছাড়াও নদীভাঙ্গন আরেক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে তীরবর্তী মানুষের কাছে। ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সদর উপজেলা শিমলা এলাকার সাধারণ মানুষ। মাত্র ৪দিনের ব্যবধানে শতশত বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘর তোলার জায়গা না থাকায় এসব মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে।
চরমিরপুর এলাকার পানিবন্দি গৃহবধূ রিমি খাতুন ও রেশমী খাতুন সাংবাদিকদের জানান, স্বামী দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্ত বন্যার পানিতে চলাফেরা করায় আজ সাতদিন যাবত জ¦র ও ঠান্ডায় ভুগছে। কাজ করতে পারছে না। ঘরে টাকা নেই চিকিৎসা করাবো। ঘরে চাল নেই। একবেলা খেয়ে দুই বেলা অনহারে থাকতে হচ্ছে। ছোট একটা ছেলে সারাদিন শুকনো খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে কিছুই কিনে দিতে পারি না।
গৃহবধূ মালেকা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতাম। করোনার কারনে কাজ বন্ধ। বাঁধে ঝুপড়ি তুলে বসবাস করছি। কত কস্টে যে দিন যাচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। অনেকে অনেক কিছু দেয়, কিন্তু আমার কপালে কিছুই জোটে না। একমাস যাবত সবাই পানিবন্দি। ঘরগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন পরষিদের সদস্য হযরত আলী সাংবাদিকদের জানান, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি। সরকার থেকে দশ কেজি চাউলের মাত্র ১৮০টি কার্ড বরাদ্দ পেয়েছি। বাদ বাকী সবাই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রতিদিন সবাই চালের জন্য ছুটে আসে। দিতেই পারি না আবার তাদের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের জানান, তিন দফা বন্যায় কৃষকের প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৪৫ ইউনিযনের প্রায় আড়াইশ গ্রামের ৩লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৬৭ মেট্টিক টন, চাল, ৩৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এসএইচ-২৯/২৭/২০ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)