গান গেয়ে ভাইরাল সিরাজগঞ্জের কৃষক ফজলু

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের ফজলু মিয়া। পেশায় কৃষিকাজ করেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলেই খাতা-কলম নিয়ে মাঠে ঘাটে বসে পড়েন জারি গান লিখতে। গান লিখে আবার সেই গানে নিজের মতো সুরও দেন তিনি। অসংখ্য জারি গান রচনা করেছেন তিনি। যেগুলো গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত।

সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া গানটি তারই লেখা। অনেক দিন আগে থেকেই ফজলু মিয়া গান লেখেন ও সুর করেন। আর সেই গানগুলো গ্রামের মানুষকে নিয়ে আপন মনে গেয়ে থাকেন তিনি। মাঝেমধ্যে নিজের লেখা গান গ্রামের সবাইকে নিয়ে নেচে গেয়ে পরিবেশন করেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই ফজলু মিয়া বিভিন্ন এলাকায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ফজলু মিয়া মূলত নৌকাবাইচের জন্যই গানটি লিখেছিলেন। তার নৌকার নাম উড়ন্ত বলাকা। বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ জনপদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম নৌকাবাইচ। বাইচের প্রতিটি নৌকার দু’পাশে বৈঠা হাতে বাইচালরা (নৌকার মাঝি) থাকেন। আর নৌকার মাঝখানে একজন গায়ক থাকেন; যিনি সুরে সুরে তাল মিলিয়ে গান গেয়ে বাইচালদের উৎসাহ দেন। আর বাইচালরা সেই গানের সঙ্গে গলা মেলান। এতে বাইচালদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। ফজলু মিয়া মূলত বাইচের নৌকায় সেই গায়কের ভূমিকাটি পালন করে থাকেন। আর এ জন্যই ‘হাতে লাগে ব্যথা রে, হাত ছাইড়া দেও সোনার দেওরা রে’ গানটি সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।

ফজলু মিয়া বলেন, ‘নৌকাবাইচ আমার নেশা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের গ্রামের উড়ন্ত বলাকা নৌকা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নৌকাবাইচে অংশগ্রহণ করি। বাইচের সময় আমি আমার লেখা এই গানগুলো করে থাকি। বিশেষ করে দেওরা গানটি বাইচের সময় আমরা নৌকার বাইচালরা মুখে মুখে গেয়ে নৌকায় বৈঠা নিয়ে এগিয়ে চলি।

ফজলু মিয়া আরও জানান, নৌকাবাইচে গাওয়া গানগুলো ভিডিও করে সেগুলো অনেকেই ইউটিউবে আপলোড করেন। আর সেই গান দেখেই সংগীত পরিচালক প্রিতম হাসানের নজরে আসেন তিনি। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওরা গানটি তৈরি করেন তিনি। অল্প দিনের মধ্যেই সারা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয় ‘হাত ছাইড়া দেও সোনার দেওরা রে গানটি’। নিজের লেখা গান দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পাওয়ায় খুশি ফজলু মিয়া।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের প্রতিযোগিতার গান এখন সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আনন্দিত ফজলু মিয়া। গ্রামবাসীও এতে অনেক খুশি।

বনগ্রাম গ্রামের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান জানান, আমাদের গ্রামের ফজলু মিয়ার গানটি দেশের সবার মন কেড়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের গ্রামের বাইচের গান দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে; এতে আমরা গ্রামবাসী খুবই আনন্দিত।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল আলম ঝুনু জানান, ফজলু মিয়া আমাদের গ্রামের গর্ব। তার গানের মাধ্যমে আমাদের গ্রামের অন্যরকম পরিচিতি পেয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আমাদের এলাকায় আসছেন ফজলু মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা ফজলু মিয়ার জন্য পুরো গ্রামের মানুষ দোয়া করি। সে যেন আরও এগিয়ে যায়।

ফজলু মিয়ার দেওরা গানটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সবাই তাকে ফজলু মাঝি নামে চেনেন। ১৯৯৮ সাল থেকে গান লেখা শুরু করেন তিনি। দেওরা গান ছাড়াও আরও অসংখ্য গান লিখেছেন ও সুর করেছেন ফজলু মিয়া।

এসএইচ-০৯/২৪/২৩ (উক্করাঞ্চল ডেস্ক)