নয়া ভোটাররা চান না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস

রাজশাহী জুড়েই ভোটের প্রচারনা জমজমাট। সব বয়সের ভোটারদের কাছে ছুটছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে তরুন বা নতুন ভোটারদের কাছে টানতে অনেকটাই ব্যস্ত প্রার্থীরা। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির রঙ্গিন চশমা পরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তাদের চোখে। এইসব ভোটাররা যেমন প্রথমবারের মতন সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন বলে উচ্ছাসিত হচ্ছেন, তেমনি তাদের দেশ গড়ার নতুন স্বপ্নের কথাও বলছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিরা। তবে নয়া ভোটাররা বলছেন অন্য কথা। জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধিদের তৎপরতা বৃদ্ধি, গুম, খুন যেমন চান না। তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, হলের সিট দখলও তারা চান না। তদের দাবি এ সব বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন এলাকায় যে মাদক সন্ত্রাস ক্রমশই বাড়ছে তাও বন্ধ করতে হবে।

তারা বলছেন এবারের নির্বাচনে এমনও প্রার্থী রয়েছেন যার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বা মহল্লায় অবাধে মাদকদ্রব্য কেনা বেচা হয়। শুধু তাই নয় প্রার্থীর বাড়ির আশাপাশ এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোদাগাড়ী, পবা, রাজশাহী মহানগরের বেশ কিছু এলাকা, বাঘা, চারঘাট।

তরুন-তরুনী ভোটাররা বলছেন, তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে দেশ অনেক এগিয়েছে। তবে তার অপব্যবহারও বেড়েছে। যার কারনে বাড়ছে সামাজিক অপরাধও। আগামীতে এসব প্রতিরোধের ব্যাপারেও কার্যকর ভূমিকা রাখার অঙ্গিকার ব্যক্ত করতে হবে। আর এ সবের পাশাপাশি যে দল সরকার গঠনের পর কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে তারা সে দলের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলমগীর বলেন, এবার তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতন ভোট দিবেন। এ জন্য তিনি বেশ উচ্ছাসিত। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিগত সময়ে যে সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটেছে আগামীতে যেনো না হয় তা বন্ধের ব্যাপারে অঙ্গিকার করতে হবে প্রার্থীদের। শুধু তাই এলাকায় যে মাদকসন্ত্রাস বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটিও কমানোর অঙ্গিকার ব্যক্ত করতে হবে।
গোদাগাড়ী কাকনহাট কলেজের শিক্ষার্থী ইসমত আরা বলেন, এলাকায় মাদক নির্মূলের ব্যাপারে কেবল প্রতিশ্রুতি নয়। সেই সাথে যুবক সমাজকে কারিগরী শিক্ষা গ্রহনের সুযোগের পরিধি কলেবরে আরো বাড়িয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করবে এমন প্রার্থীকে আগামী দিনের জন্য বেছে নিবেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী কোর্ট কলেজের শিক্ষার্থী আশফাক বলেন, নতুন ভোটার হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেবার সুযোগ পেয়েছিলেন। তেমনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রথমবারর মত ভোট প্রদান দিবেন। তা নিয়ে তিনি বেশ আনন্দিত। তবে যে প্রার্থী কর্মসংস্থান পাইয়ে দেবার ব্যাপারে কোন ধরনের অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত হবেন না, এমন প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সময় বেছে নিবেন।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গেলো দশ বছরে রাজশাহীসহ দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অবৈতনিক ব্যবস্থায় লেখাপড়া সুযোগ পাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ বৃদ্ধিতে তারা জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছে বর্তমান শিক্ষার্থীরা। আগামীতে আরো এই ধরনের সুযোগ বাড়বে সেই বিষয়গুলো নতুন ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। নৌকা প্রতীক বিজয় হলে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সরকার অগ্রনী ভূমিকা রাখবে তা তরুণ-তরুনী ভেটারদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, তরুণ-তরুনীরা লেখা পড়া শেষ করে যেনো কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় সেই সব পরিকল্পনার কথা তাদের বলা হচ্ছে। কারণ তারাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় বড় ভূমিকা পালন করবেন। ঘোষিত ইশতেহারে সেই বিষয়গুলো আরো পরিস্কার করে বলা হয়েছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস কারা করেছে শিক্ষার্থীরা তা ভাল করেই জানেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৬২ জন। যা দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৭ জন। এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৫ জন। এর মধ্যে নতুন পুরুষ ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯১২ জন ও নারী ভোটার ৯৭ হাজার ৯৯৩ জন। এ সব নতুন ভোটারের মধ্যে ৯০ ভাগ তরুণ-তরুণী। যারা এর আগে ভোটার হতে পারেনি। আর বাকি ১০ ভাগ জেলার বাহির থেকে আসা নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন ভোটার তালিকায়। নতুন ভোটারের অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড পাননি। তারপরেও ভোটার তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তারা ভোট দিতে পারবেন।

এসএইচ-০৭/২৪/১২ (সুমন হাসান)