পৃথিবীর দেশে লিঙ্গ বৈষম্যতা বেড়েই চলেছে।গত এক দশক ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারী-পুরুষের মধ্যে আইনি অধিকার বিষয়ক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।বিশ্বের মাত্র ছয় দেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে কাজের ক্ষেত্রে আইনি সমতা রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
তাদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ ও সুইডেনে নারী ও পুরুষের মধ্যে কাজ করায় আইনি সমতা বজায় রয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনটি ১৮৭ দেশে লিঙ্গ বৈষম্যতা পরিমাপ করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এক দশক আগে পৃথিবীর কোন দেশেই নারী ও পুরুষের মধ্যে আইনি সমতা ছিল না।
বিশ্ব ব্যাংকের সূচকটি তৈরি করা হয়েছে, কর্মজীবী নারীদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে এমন আটটি নির্দেশক হিসেব করে। এসব নির্দেশকের মধ্যে রয়েছে, চলাফেরার স্বাধীনতা, কাজ শেষে ভাতা পাওয়া, আইনি বাধা, নিয়োগদান বা বাণিজ্যিক উদ্যোগ। প্রত্যেক দেশকে এসব নির্দেশকের ভিত্তিতে স্কোর দেওয়া হয়েছে। যেসব দেশের স্কোর ১০০ হয়েছে সেগুলোতে সমতা সবচেয়ে বেশি। আর এমন দেশের সংখ্যা মাত্র ছয়টি।
গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক হিসেবে, গড়ে স্কোর বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ পর্যন্ত। এছাড়া, ৯০ এর উপর স্কোর রয়েছে ৩৯ দেশের। এগুলোর মধ্যে ২৬টি দেশই উচ্চ আয়ের দেশ। সেগুলোর মধ্যে আটটি দেশ ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায়। দু’টি লাতিন আমেরিকান ও ক্যারিবিয় দেশ।
এদিকে আঞ্চলিক স্কোরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এক দশক আগে অঞ্চলটির স্কোর ছিল ৫০। এক দশকে সেখান থেকে বৃদ্ধি পেয়ে স্কোর হয়েছে ৫৮.৩৬। সাব-সাহারান আফ্রিকায় স্কোর বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৪.০৪ থেকে ৬৯.৬৩ তে।
সবচেয়ে কম অগ্রগতি দেখা গেছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয়। এই দুই অঞ্চলে গড় স্কোর হচ্ছে মাত্র ৪৭.৩৭। এক দশকে স্কোর বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ২.৮৬.
প্রতিবেদনটি উন্মোচন করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর এই সংস্কার আনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রয়েছে।
এদিকে, প্রতিবেদনে সর্বোপরি অগ্রগতির কথা বলা হলেও, বৈশ্বিক পর্যায়ে সমতা আনতে হলে আরও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক আইনি সংস্কার কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন আনেনি। আর কোন দেশ ১০০ স্কোর পাওয়া মানেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০০ ভাগ সমতা বোঝায় না। এর মধ্যে অসম বেতন স্কেল একটি বড় বাধা। সুইডেনে নারীরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে ৫ শতাংশ কম অর্থ উপার্জন করে। যুক্তরাজ্যে এই হার ৮ শতাংশ।
জর্জিয়েভা বলেন, এটা একটি হারানো সুযোগের দিকে নির্দেশ করে। নারীরা যদি পুরুষের সমান আয় করে তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ১৬ লক্ষ কোটি ডলার বেশি সমৃদ্ধ হতো।
এসএইচ-০৮/০২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান)