এনআরসি নিয়ে উদ্বিগ্ন কবি সাহিত্যিকরা

ভারতের আসামের পরে যে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী তৈরি করা হবে, তা ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আবারও ঘোষণা করেছেন। দিল্লিতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দলের সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বারে বারেই বলে আসছেন যে তার রাজ্যে তিনি এনআরসি হতে দেবেন না।

বৃহস্পতিবার কলকাতায় এনআরসি-র প্রতিবাদে একটি বড় মিছিল করেছেন মিস ব্যানার্জী।

এই রাজনৈতিক চর্চার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের যেসব মানুষ পূর্ববঙ্গ থেকে চলে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই বলছেন এনআরসি হলে নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ নথি যোগাড় করতে তাদেরও বেগ পেতে হবে।

এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ, তেমনই আছে নানা ক্ষেত্রের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি – সাহিত্যিক, নাট্যকার, গায়ক বা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। এরকমই একজন, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখার্জি।

“কবে সীমানা পেরিয়েছি, সেটা তো আমার স্মৃতিতে আছে। কোন স্কুলে কতবছর পড়েছি, সেটাও আমার মনে আছে। কিন্তু এসবের যদি কাগজপত্র দিতে বলে, তা তো দিতে পারব না! তাকে কী আমাকে বার করে দেবে? সেটাই বা আমি মানব কেন? আর আসামে তো দেখছি, অনেকে বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরেও তাদের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে,” বলছিলেন মি. মুখার্জী।

সাহিত্যিক মিহির সেনগুপ্তর জন্ম দেশভাগের দিন পনেরো পরে – বরিশালে। ব্রজমোহন কলেজে পড়াশোনাও করেছেন। তারপরে ১৯৬৩ সালে ভারতে চলে আসেন তিনি। এতদিন পরে সেই সব নথি দেওয়া একরকম অসম্ভব বলে তার মনে হচ্ছে।

মিহির সেনগুপ্তর কথায়, “এদেশে চলে আসার পরে আমি সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট করিয়েছিলাম মূলত পাসপোর্ট বানাতে হবে বলে। কিন্তু সেই সার্টিফিকেট এখন কোথা থেকে খুঁজে বার করব ৭৩ বছর বয়সে।”

“আসলে দেশভাগের সময় থেকেই এই সমস্যা চলে আসছে। একেকবার একেকরকম ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে যে তার পরে যারা আসবে, তারা আর নাগরিকত্ব পাবে না। কিন্তু উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার এই সমস্যার সমাধান কী এভাবে হয় নাকি?” প্রশ্ন মি. সেনগুপ্তের।

এরা দুজন যেমন নিজেরাই দেশভাগের পরে ভিটেমাটি ছেড়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন, তেমন এমন অনেকে আছেন, যাদের পূর্বপুরুষরা চলে এসেছিলেন ভারতে।

দুই বা তিন প্রজন্ম পরে এখন তারাও জানেন না সেই সব নথি কোথায় আছে। কথা বলেছিলাম নাট্যকার ও অভিনেত্রী খেয়ালী দস্তিদারের সঙ্গে।

তিনি বলছিলেন, “আমাদের আগের প্রজন্মের ক্ষেত্রে তো কোনও কিছুই ডিজিটাইজড ছিল না। তাই তাদের সেই সব ডকুমেন্ট কীভাবে তারা যোগাড় করবেন ভেবেই তো আমার খারাপ লাগছে। আর যদি এনআরসি হয়, তাহলে যেসব নথির কথা শুনছি, আমার নিজেরই তো সেসব কোথায় আছে জানি না। আমার নিজের বার্থ সার্টিফিকেট তো কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।”

পশ্চিমবঙ্গেও যদি এন আর সি হয়, তাহলে যে শুধু পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা মানুষদের নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে, তা নয়। রাজ্যের সব বাসিন্দাকেই নথি যোগাড় করে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ভারতীয়।

এসএইচ-০৭/১৩/১৯ (অমিতাভ ভট্টশালী, বিবিসি)