রোহিঙ্গা ইস্যু উঠবে জাতিসংঘে

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে বিষয়টি এ মাসেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তুলে ধরবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

“আন্তর্জাতিক মহল যদি মিয়ানমারকে সবাই বলে এবং চাপ দেয়, তাহলে তারা শুনবে” – দ্বিপাক্ষিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় দু’ বছরেও কোন ফল না মেলার পর আজ একথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

দেশের সামনে এখন মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া বিকল্প আর কোন পথ নেই – এটাই মত বিশ্লেষকদের।

অবশ্য পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক চেষ্টাও বাংলাদেশ অব্যাহত রাখতে চাইছে ।

দেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে চাইছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আজ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরবেন।

“আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো ছাড়া মিয়ানমার কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেবে না, এই ভাবনাটা এখন বাংলাদেশ সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে” – বলছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির জন্য একটা কূটনৈতিক চেষ্টা থাকলেও, এতদিন বাংলাদেশের গুরুত্ব ছিল দ্বিপাক্ষিক সমাধানের ব্যাপারে। কিন্তু এই চেষ্টায় সংকটের দুই বছর পার হলেও সমাধান মেলেনি।

অবশ্য দ্বিপাক্ষিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, সেটাও স্বীকার করছে না বাংলাদেশ।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন,সেজন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশ এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক-ভাবে সমাধানেও ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

“মিয়ানমার এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ফলে সমাধানও তাদের কাছে রয়েছে। আমরা চাই, রোহিঙ্গারা তাদের অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফেরত যান। আন্তর্জাতিক মহল যদি মিয়ানমারকে সবাই বলে এবং চাপ দেয়, তাহলে তারা শুনবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন ২২শে সেপ্টেম্বর। সেখানে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরবেন।

মিয়ানমার যেন প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, সেজন্য রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষাসহ অধিকারগুলো যেন নিশ্চিত করা হয়, এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের যেন রোহিঙ্গাদের বসবাসের জায়গায় নিয়ে দেখানো হয়—এই বিষয়গুলোই প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরতে পারেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের বক্তব্যের ব্যাপারে এখন চীনের সমর্থন রয়েছে। ফলে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধিবেশনের বাইরে মিয়ানমারের সাথে বৈঠক করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“চীন যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনও বিশ্বাস করে যে এই সমস্যা বহুদিন টিকে থাকলে এই অঞ্চলে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে, তাতে সবারই অসুবিধা হবে। সেজন্য চীন আমাদের সাথে এক হয়ে মিয়ানমারের সাথে আলাপ করছে। আমাদের বিশ্বাস এই চেষ্টায় আমরা সফল হবো।”

বিশ্লেষকরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া মিয়ানমার শুধু দ্বিপাক্ষিক-ভাবে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেবে না বলে তারা মনে করেন।

সেখানে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো ছাড়া তারা বিকল্প দেখছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেছেন, এখন শক্তিশালী অনেক দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এগুতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলছিলেন, “কূটনৈতিক চাপ ছাড়া আর কোন উপায়ে কিন্তু আমরা সমাধান করতে পারবো না। সেজন্য কূটনৈতিক চাপ আমাদেরকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে মিয়ানমার না পেছাতে পারে। এখানে চীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। চীনের মাধ্যমে চাপ তৈরি করা সম্ভব হলে সেটি বেশি ফলপ্রসূ হবে।”

এদিকে, কর্মকর্তারা বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোকেও আরও সক্রিয় করার জন্যও ঐ দেশগুলোর সাথেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধিবেশনের বাইরে আলোচনা করবে।

এসএইচ-০৭/১৯/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)