আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের কলঙ্কিত দিন।
৪৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে উঠেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যাযজ্ঞে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে জাতি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ১৪ ডিসেম্বরে বাঙালি মেধার নৃশংস এই নিধনযজ্ঞ যা বিশ্বকে হতবিহ্লব করে তুলেছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল পরাক্রমের সামনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতেছিল পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। তারা চেয়েছিল বাঙালিকে মেধা-মননশূন্য করতে। এ জন্য তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অগ্রগণ্য মানুষের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঘাতকদের এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল রাজাকার-আলবদর বাহিনী।
মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ঘাতকরা। বুদ্ধিজীবীদের তারা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রাজাকার-আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। বিজয় অর্জনের পর রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে একে একে পাওয়া যায় হাত-পা-চোখ বাঁধা দেশের খ্যাতিমান এই বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। হত্যার আগে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল তাদের ওপরে। এসব মৃতদেহ পাওয়ায় উন্মোচিত হয় ঘাতকদের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা। এ ঘটনায় বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।
১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। পরে কৃতী এসব সন্তানের তালিকা তুলে দেয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে ঢাকার রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। চূড়ান্ত নীলনকশার বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজো নিরূপণ করা যায়নি। তবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিক-প্রকৌশলী।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এসব বাণীতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।
দেশের সর্বত্র আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়বে।
এসএইচ-০২/১৪/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)