চার বছর পর ঢাকায় হরতাল

দেশে প্রায় চার বছর পর একটি হরতাল পালন করছে বিরোধী দল বিএনপি। দেশের মানুষ একসময় যে ধরণের সহিংস হরতালের সাথে পরিচিত ছিল, এটি সেরকম কিছু না হলেও, রবিবার সপ্তাহের শুরুর দিন হিসেবে সকালবেলা ঢাকার রাস্তায় যথেষ্ট কমই যানবাহন চোখে পড়েছে।

অনেক জায়গাতেই আগের রাতে মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘রোববার অনিবার্য কারণবশত বন্ধ রাখা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’।

ঢাকা গুলশান এভিনিউর মতো ব্যস্তা সড়কে রোববার দুপুর পর্যন্ত যানবাহণের তেমন একটা চাপ দেখা যায়নি।

কারওয়ান বাজার এবং এর আশেপাশের এলাকায় যেখানে যানজট নিয়মিত চিত্র থাকে, সেখানে কোন সিগন্যালেও আটকে থাকতে হচ্ছে না সড়কে নামা গাড়িগুলোকে।

মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকার অবস্থা অনেকটা একই। রাস্তায় প্রাইভেট কার ও বাস চলতে দেখা গেলেও সেগুলোর সংখ্যা ছিল অন্যান্য যেকোন রোববারের তুলনায় কম।

মিরপুরবাসীকেও তেমন যানজটে পড়তে হয়নি।

এছাড়া বিমানবন্দর সড়কে সিগন্যাল পড়ার সময় যানবাহনের জটলা তৈরি হলেও সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

শনিবারই বাস মালিক সমিতি জানিয়ে রেখেছিল, তারা রবিবার ঢাকার সড়কে তাদের পরিবহণ চলাচল অব্যহত রাখবে।

হরতাল ঘোষণার পরপরই মাঠে থাকার পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ।

যদিও রোববার দুপুর পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায় কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা বা সহিংসতার কোন খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দুপুরে রুহুল কবির রিজভি আহমেদের নেতৃত্বে কিছু বিএনপি নেতাকর্মী অবস্থান নিলে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।

শনিবার রাত ৮টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আজকের এই হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন। যা রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে।

আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আশা করব, ঢাকাবাসী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে এই হরতাল পালন করবে।”

বিএনপির ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

সন্ধ্যার পর থেকে ভোটের ফল আসতে শুরু করে। সেখানে দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়।

তবে ফলাফল পুরোপুরি প্রকাশ হওয়ার আগেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে আজ হরতালের ডাক দেয় বিএনপি।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি৷

ওই হরতাল-অবরোধ ও আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একের পর বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের কঠোর অবস্থান এবং পুলিশের ধরপাকড়ের মুখে বিএনপির আন্দোলন অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে৷

এরপর ২০১৫ সালের এপ্রিলে খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির অবসান ঘটান। সেদিনের পর থেকে বিএনপিকে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের হরতাল কর্মসূচিতে সরাসরি সমর্থন দিলেও তারা নিজেরা কোন হরতালের ডাক দেয়নি।

দলটির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির সত্ত্বেও দলের পক্ষ থেকে কোন হরতাল ডাকা হয়নি।

ছোটখাটো মিছিল বা সভা-সেমিনার ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এই দলের নেতাকর্মীদের সেভাবে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেও দেখা যায়নি।

এসএইচ-০৬/০২/২০ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)