অপ্রতুল সহায়তা,শীতে কাহিল মানুষ

উত্তর-পশ্চিমসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ৷ বেড়েছে ঠান্ডার তীব্রতা৷ পর্যাপ্ত সহায়তা না থাকায় কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ৷ শীতজনিত রোগে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা৷ হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা৷

রোববার বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় সাত দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আগামী দুই দিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে৷ তবে ধীরে ধীরে রাতের তাপমাত্রাও বাড়বে৷

কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ৷ উত্তরের কয়েকটি জেলার কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন নিদারুণ শীত কষ্টে৷ অসহায় জীবন যাপন করছেন খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষজন৷ শীত বস্ত্রের অভাবে ভোগান্তিতে রয়েছেন বহু মানুষ৷

কনকনে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন৷ গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন অনেকেই৷ কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, সরকারিভাবে জেলার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে৷ এছাড়া জেলার নয় উপজেলায় গরম কাপড় কিনে বিতরণের জন্য ছয় লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷

তবে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৪৫০ পিস কম্বল পাওয়া গেছে৷ আমার ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবার রয়েছে৷ এদের অধিকাংশ চরাঞ্চলের মানুষ৷ এদের অধিকাংশ হতদরিদ্র৷ আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি তালিকাও করেছি৷ কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোন ধরনের সহায়তা না আসায় মানুষগুলো খুব কষ্টে দিন পার করছেন৷ গত ২০ দিনে সাত-আট জন বয়স্ক মানুষ মারা গেছেন৷ শীতের কারণেই যে মারা গেছেন তা বলছি না৷ কিন্তু তাদের মৃত্যুর জন্য শীতও বড় কারণ৷ দ্রুত এখানকার মানুষের সহায়তা দরকার৷’’

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফ জামান বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি হাসপাতালে আসছেন৷ গত কয়েকদিনে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে৷ আগে যেখানে ২০-২২ জন রোগী আসত এখন সেখানে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫-৪০ জন৷ বিশেষ করে শিশুদের নিউমোনিয়া বেশি হচ্ছে৷ তবে হাসপাতালে কারো মৃত্যু হয়নি৷”

ঢাকা শিশু হাসপাতালের নিউমোনিয়া বিভাগ ও এ্যাজমা সেন্টারের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘‘ঢাকাতেও নিউমোনিয়ার রোগী বাড়ছে৷ বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে৷ আমরা সবাইকে বলছি, শিশুদের কোনভাবে ঠান্ডা লাগানো যাবে না৷ ঠান্ডার কারণেই এটা হচ্ছে৷ প্রতিটি শিশুকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই রোদে রাখতে হবে৷ ভালোভাবে শীতের পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে৷ ঠান্ডা থেকে বুকে কফ বসে যাওয়ায় শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে বেশি৷’’

শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচলও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে৷ গত তিন দিনে নীলফামারি বিমানবন্দরে দুপুর একটা পর্যন্ত বিমান উঠানামা করতে পারেনি৷ অন্যদিকে রাত ১০টার পর থেকে আরিচা-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-কাঁঠালিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে৷

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বর্তমানে যে শৈত্যপ্রবাহটি চলছে, এটি আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে৷ আপাতত তাপমাত্রা আর নামবে না৷ আগামী তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রার উন্নতি হবে৷ তবে এ মাসের শেষ দিকে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ আসছে৷ সেটার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে৷’’

এদিকে, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা৷ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা তলানিতে নেমে গেছে৷ এ অবস্থায় বীজতলা পচে বোরোর চারা সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷

কৃষকরা বলছেন, তারা বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন৷ কুয়াশার হাত থেকে বাঁচাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রাখছেন৷ তবে অনেকসময় তাতেও কাজ হচ্ছে না৷ গত আমন এবং আউশ মৌসুমে বন্যা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তারা ভালো ফলন পাননি৷ এবারের শীত-কুয়াশার কারণে বোরো নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে গতবছর বোরোর ফলন হয়েছিল দুই কোটি এক লাখ ৮১ হাজার ৩৭৯ মেট্টিক টন৷ এ বছর বোরোর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ মেট্টিক টন৷ এর মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু হাওর এলাকায় বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে৷ অন্য এলাকায় চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে৷

এসএইচ-০৪/২১/২০ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)