বাড়তি ভাড়ায় ‘নিষিদ্ধ’ ঈদ যাত্রা

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়। তবে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস।

ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ায় ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে বিভিন্ন বাসের টিকেটও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি টাকায়। বাসের পাশাপাশি চলছে মাইক্রোবাসও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশের নজর এড়াতে ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন সড়কে রাখা হয়েছে দূরপাল্লার বাস। রাতে এগুলো দ্রুত কাউন্টারের সামনে যায়। সেখানে থাকা লাইনম্যান গাড়িতে যাত্রী তুলে দেয়। রাত ১০টার পর থেকে গন্তব্য জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বাসগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমরাইল এলাকার এক কাউন্টারম্যান বলেন, ‘চট্টগ্রাম, বান্দরবন ও খাগড়াছড়িতে যাওয়ার রাতের বাসের বুকিং চলছে। সিটপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ১২০০ টাকা। এসিতে গেলে ১৮০০ টাকা। মাঝপথে নামলেও এ ভাড়াই দিতে হবে। ঈদের আগের দুই দিন পর্যন্ত সিট বুকিং চলছে। প্রতি সিটে একজন করে যাত্রী থাকবে।’

ভাড়া বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানকার ট্রাফিক পুলিশ ও মেঘনা ব্রিজের সামনের হাইওয়ে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া অন্য জেলায় তো আছেই। তাই টিকিটের দাম বেশি।’

চিটাগাং রোড এলাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জগামী দুইটি পরিবহনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে এক লাইনম্যানকে।

তিনি বলেন, ‘এই দুই জেলায় যেতে হলে প্রতি সিটের জন্য এক হাজার টাকা দিতে হবে। চাইলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে সিট বুকিং করা যাবে। রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গাড়ি পাবেন।’

ভাড়া বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় খরচ বেশি তাই ভাড়া বেশি।’

নোয়াখালীতে যাওয়া ৬২ সিটের একটি গাড়ির প্রতি সিটের টিকেট ৮০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন এক কাউন্টারম্যান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে রাত ৮টার পর কয়েকটি পরিবহন পাবেন। আপনি যে পরিবহনে খুশি যেতে পারেন। তবে সব সিটে যাত্রী উঠবে এবং মাস্ক থাকতে হবে, কারণ রাস্তায় পুলিশ ধরে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মদনপুর ও মোগরাপড়া চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে মাইক্রোবাস থামিয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৬টি জেলার যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে দেড় গুণ ভাড়া। গাড়িতে এসি চালু করলে দিতে হবে দ্বিগুণ ভাড়া।

মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে চারটি অংশে মাইক্রোবাসে যাত্রী তোলা হয়। প্রতি মাইক্রোবাসে যাত্রী নেয়া হয় ১৫ জন করে। কুমিল্লা পর্যন্ত ননএসি মাইক্রোবাসে প্রতি যাত্রীর ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। লক্ষীপুর সদরে ৭০০ টাকা, নোয়াখালী ও ফেনীতে ৮০০ টাকা। চট্টগ্রামে ১২০০ টাকা। এসিতে গেলে যোগ হবে এই ভাড়ার আরও অর্ধেক।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মাইক্রোবাসের এক লাইনম্যান বলেন, ‘দিনে ঘরমুখী মানুষের ভিড় অনেক। বেশিরভাগ মানুষর পক্ষে একা গাড়ি নেয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের যে ভাড়া তার সাথে অন্যান্য খরচ যোগ করে মাইক্রোবাসে যাত্রী উঠানো হয়। এখানে অনেকে যুক্ত আছেন।’

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, ‘মাত্র পাঁচ জন লোকবল নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করব না তাদের দেখব? গাড়ির চাপ এতটাই বেড়েছে যে তাদের সামনে যাওয়ার সময় পাইনি। এ এলাকার দূরপাল্লার সব পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।’

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ অনেক গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়েছে। মামলা দেয়া হয়েছে কিছু গাড়িকে।

হাইওয়ে পুলিশের কাঁচপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস যাতে মহাসড়ক দিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য হাইওয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। রাতে যেসব দূরপাল্লার বাস যাত্রী নেয় তাদের গাড়ি আটক করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘তবে একসাথে কয়েকটি গাড়ি থাকলে সব তো ধরা যায়না। আর টাকা নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ করছি।’

জেলা ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে যাতে দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে না পারে। পাশাপাশি মাইক্রোবাসে যাত্রী নেয়া হলে গাড়ির নামে মামলা দিতে বলা হয়েছে।’

এসএইচ-০৮/০৯/২১ (অনলাইন ডেস্ক)