মূল আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেল খাটছেন আরেকজন!

মূল আসামি বাইরে, কিন্তু ভয়ভীতি আর নানা প্রলোভনে জেল খাটছেন অন্য এক ব্যক্তি। বন্ধুর প্ররোচনায় নিজের পরিচয় গোপন করে জেল খাটছেন চাঁদপুরের কচুয়া এলাকার আবু ইউসুফ লিমন।

কিন্তু যার কারণে এমন নির্মম পরিণতি সেই প্রতারক রবিউল ইসলাম ওরফে আপনকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরিবর্তে বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আটকে আছেন উদীয়মান এই ক্রিকেটার। এমন দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম সরদার।

গত ২০১৮ সালে গাজীপুরে খুন হন পুলিশের সিআইডিতে কর্মরত উপপরিদর্শক মামুন ইমরান খান। ঘাতকরা পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। তার মরদেহ গজারির বন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ঘটনায় ওই বছরের অক্টোবর মাসে মামলা হলে পরের বছর আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

ওই মামলার ছয় নম্র আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপনের প্ররোচনায় নিজের পরিচয় গোপন করে আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিরীহ যুবক আবু ইউসুফ লিমন (২২)। তারপর থেকে গত ৭ মাস ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি লিমন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া আশুতিয়া গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে প্রকৃত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। রাজধানী ঢাকায় অবস্থান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে তাদের দুজনের পরিচয় হয়। তবে লিমনের পরিবারের দাবি, তাদের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হওয়ায় রবিউল ইসলাম ওরফে আপনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির লোভে পড়ে তার পক্ষে প্রক্সি দেয় সে। ফলে তাকে এখন জেল খাটতে হচ্ছে।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. নুরুজ্জামান। একই উপজেলার আইনপুর গ্রামে তার বাড়ি। স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে বেশ ভালোই যাচ্ছিল তার। একমাত্র ছেলে আবু ইউসুফ এসএসসি গ্রামের স্কুল থেকে পাস করে কুমিল্লায় প্যারা মেডিকেলে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু ক্রিকেট পাগল আবু ইউসুফ কিছুদিন না যেতেই পড়াশোনা ছেড়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান।

সেখানে মিরপুরের একটি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। আর একটি মেসে থাকার সুবাদে পরিচয় ঘটে খুনি ও প্রতারক চক্রের সদস্য রবিউল ইসলাম ওরফে আপনের সঙ্গে। পুলিশের উপপরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে আবু ইউসুফ লিমনের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। তবে এই ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে প্রকৃত খুনি মামলার ছয় নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন।

আবু ইউসুফ লিমনের বাবা মো. নুরুজ্জামান জানান, পড়াশোনা শেষ না করেই ঢাকায় পাড়ি দেয় ছেলে। আর তার জীবনে তা-ই কাল হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, এসব কারণে ছেলের সঙ্গে আমি রাগ করলেও তার মা গোপনে ছেলেকে টাকা পাঠাতেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে ছেলে বড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়। কিন্তু তারপর তার মোবাইল ফোন এবং ফেসবুক বন্ধ।

একই সঙ্গে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কচুয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন বাবা। তার কিছুদিন পর জানতে পারেন ছেলে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। লিমনের বাবা মো. নুরুজ্জামান কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে বিনা কারণে যারা অপরাধী করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এলাকার ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, লিমন বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে। ক্রিকেট পাগল এই ছেলে অপরাধ করতে পারে না।

এদিকে একমাত্র ছেলে আবু ইউসুফের অনাকাঙ্ক্ষিত এমন পরিণতিতে তার মা হালিমা বেগম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বোন আয়েশা আক্তার লিজা এবং স্কুলপড়ুয়া ছোট বোন খাদিজা আক্তার ফিজা তাদের ভাইয়ের জন্য খাওয়া ভুলে গেছে। তাদের দাবি, বড়ভাই আবু ইউসুফ লিমন ক্রিকেট পাগল। সে কোনো অবস্থায় খুনি হতে পারে না। তাই বিনা অপরাধে জেলবন্দি ভাইয়ের মুক্তির অপেক্ষায় দিন কাটছে তাদের।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, লিমন নামে একটি ছেলে নিখোঁজ হয়েছে। এই নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে তার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু পরে পুলিশকে জানানো হয়, লিমন অন্য একটি মামলায় জেলে বন্দি।

জানা গেছে, সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে আবু ইউসুফের জামিনের শুনানি হবে। পরিবারের আশাবাদ এতে জামিন মিলবে আবু ইউসুফের।

এসএইচ-০৯/৩০/২১ (অনলাইন ডেস্ক)