চরিত্রহীন অপবাদে বিদেশফেরত ৬২ শতাংশ নারীশ্রমিক বেকার!

মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকরা। গবেষণা-প্রতিষ্ঠান বিলস এক প্রতিবেদনে দাবি করছে, ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের ৩৮ শতাংশকে সমাজে ‘চরিত্রহীন’ হিসেবে দেখা হয়। এ অপবাদে স্বামী-সংসার হারিয়েছেন অনেকেই। ঠাঁই দেয়নি বাবা-মাও। ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক পাননি কোনো কাজ। পরিবারে সচ্ছলতা তো দূরে থাক ৬১ শতাংশই আটকে আছেন ঋণের জালে।

এ অবস্থায় বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের পুর্নবাসনে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিলস।

দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। করোনা মহামারির মধ্যেও বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন, এক কোটি ২০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক। যার মধ্যে ৯-১০ লাখ রয়েছেন নারী।

এসব প্রবাসী নারীশ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নানারকম নির্যাতন সহ্য করে দেশে ফেরত এসে মুখোমুখি হন কঠিন এক বাস্তবতার। যশোর, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামের বিদেশ ফেরত ৩২৩ প্রবাসী নারী শ্রমিকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করছে, কর্মক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ নারী শ্রমিক জবরদস্তিমূলক শ্রমের শিকার হয়েছেন। খাদ্য ও পানির সংকটে ভুগেছেন ৬১শতাংশ। ফলে বছর না ঘুরতেই বাধ্য হয়ে দেশে এসেছেন ৫৫ শতাংশ নারী শ্রমিক।

শুধু কি তাই! দেশে এসে কাজ না পেয়ে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন ৬১ শতাংশ নারী শ্রমিক। বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিদেশ ফেরত ৬০% নারী শ্রমিক বেকার, ৬৫% শ্রমিকের নিয়মিত মাসিক কোন আয় নেই, ৬১% শ্রমিক এখনও ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন, ৭৫% শ্রমিকের কোন সঞ্চয় নেই এবং ৭৩% শ্রমিক তাদের পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।

চরিত্রহীনার অপবাদে পরিবার-পরিজন হারিয়ে মানষিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

বিদেশ থেকে ফেরার সময় পরিবারের সদস্য দ্বারা বিমানবন্দরেই অযাচিত আচরণের শিকার হয়েছেন ১৭% শ্রমিক। ১৫% বিদেশ থেকে ফিরে আসা নারী তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন। ১১% নারী শ্রমিকের স্বামী তাদের ছেড়ে চলে গেছে এবং ২৮% নারীশ্রমিক তাদের দাম্পত্য জীবনে বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছেন। বিদেশ ফেরত নারীশ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নাজুক। ৫৫% শ্রমিক শারীরিকভাবে অসুস্থ, ২৯% এর মানসিক অসুস্থতা রয়েছে এবং ৮৭% শ্রমিক মানসিক অসুস্থতার কোন চিকিৎসা পায়নি।

বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকরা সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। পরিবার ও সমাজ তাদের সাথে বৈরী এবং অমানবিক আচরণ করে। ৩৮% নারী শ্রমিক বলছেন সমাজে তাদের নিম্ন শ্রেণির চরিত্রহীন নারী বলে গণ্য করা হয়।

করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়ে প্রতিমাসে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ নারী শ্রমিক দেশে আসছেন। এ অবস্থায় নারী শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন; কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সহজ শর্তে ঋণ দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে বিলস।

এসএইচ-২৬/২৭/২১ (অনলাইন ডেস্ক)