বাসে উঠলেই ১৫ টাকা

যাত্রী যত কম দূরত্বেই যাক না কেন, তাকে কমপক্ষে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য করছেন বাস পরিচালনাকারীরা। ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ টাকাও নেয়া হচ্ছে। অথচ ঢাকাতে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৮ টাকা এবং বড় বাসের ক্ষেত্রে ১০ টাকা।

বৃহস্পতিবার গাবতলী, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সাইন্সল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, পল্টন, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহানগরে মিনিবাসে ছোট দূরত্বেও ১৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

বাড়তি ভাড়া নেয়ার কারণে সুপারভাইজার, কন্ডাক্টরদের সঙ্গে প্রতি স্টপেজেই যাত্রীদের কথা-কাটাকাটি হচ্ছে।

পুনর্নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা বাসগুলোতে টাঙিয়ে রাখেনি চালক ও স্টাফরা। এ কারণে কোন দূরত্বের কত ভাড়া তাও বুঝতে পারছেন না যাত্রীরা। ভাড়ার তালিকা না দেখিয়ে যাত্রীদের তা সম্পর্কে অন্ধকারে রেখেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এই সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ নিয়েও যাত্রীদের ক্ষোভ রয়েছে। তারা বলছে, আগে যেখানে ৫ টাকায় যাওয়া যেত, নতুন সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণের কারণে একই পথ পাড়ি দিতে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার তরঙ্গ পরিবহনের একটি বাস মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীর উদ্দেশে ছেড়ে যয়। বাসটি জিগাতলা পার হওয়ার পর সিটি কলেজের পাশ থেকে কয়েকজন যাত্রী ওঠেন। তারা যাবেন শাহবাগ। সিটি কলেজ থেকে শাহবাগ এক কিলোমিটারের কম। অথচ এ দূরত্বে জনপ্রতি ভাড়া দাবি করা হয় ১৫ টাকা করে। যাত্রীরা কিছুতেই ১৫ টাকা করে দিতে রাজি নন।

কন্ডাক্টরের দাবি, জিগাতলার পর তাদের ‘ওয়েবিলের চেক’ (বাসের যাত্রীসংখ্যা গুনতে মালিকদের যাচাই ব্যবস্থা) ঢাকা ক্লাবের সামনে। এর মধ্যে যারা যারা নামবে তাদের ১৫ টাকাই দিতে হবে। এটাই নিয়ম। নয়তো বাড়তি টাকা তাদের পকেট থেকে দিতে হবে।

অন্য যাত্রীরাও এই ভাড়ার প্রতিবাদ করতে থাকেন। একজন বলেন, ‘তোমরা তো ডাকাতি শুরু করছ। ডাবল ভাড়া নিচ্ছ।’

তর্ক শেষে তিন যাত্রীকে ১৫ টাকা করে ভাড়া দিয়েই শাহবাগে নামতে হয়।

একই দৃশ্য দেখা গেছে বৈশাখী পরিবহনে। এই পরিবহনের একটি বাস ধামরাইয়ের বাথুলি বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে নতুনবাজার যায়। বাসটিতে মহাখালী থেকে ওঠেন এনজিও কর্মকর্তা জেসমিন নাহার। যাবেন নতুনবাজার। কিন্তু বাসটি গুলশান যাওয়ার পর বাস সুপারভাইজারের সঙ্গে তর্ক বাধে তার। তিনি ১০ টাকা দিতে চাইলে বাস কন্ডাক্টর রফিকুল ইসলাম জানান, ভাড়া ১৫ টাকা। কোনোমতেই যাত্রী ১৫ টাকা ভাড়া দেবেন না।

এই প্রতিবেদককে জেসমিন নাহার বলেন, ‘মহাখালী থেকে নতুন বাজার ভাড়া ৯ টাকা হওয়ার কথা কিন্তু তারা নিচ্ছে ১৫ টাকা। আমরা তো এখন হিসাব করেই ভাড়া দিতে চাই। আমি সরকারি রেটে ভাড়া দেব। কিন্তু উনি নিচ্ছেন না।’

বাড়তি এই ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে বৈশাখী পরিবহনের চালক ও কন্ডাক্টর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সরকার মহানগরীতে বড় বাসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তা না নিয়ে আরও ৫ টাকা বেশি নেয়ার কারণ হিসেবে ওয়েবিলকে দায়ী করেন চালক ও কন্ডাক্টর। তারা বলছেন, এর কম ভাড়া নেয়ার সুযোগ তাদের নেই।

সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকেও বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রীরা। মিরপুর-১ আনসার ক্যাম্প থেকে সদরঘাট সড়কে চলাচল করে হিমাচল পরিবহনের এফআর মোটরস। এই পরিবহনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০ টাকা। আর এক ওয়েবিল স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা। এর মধ্যে একজন যাত্রী যেখানেই নামুক তাকে ৫০ টাকা দিতে হবে।

পরিবহনটির ওয়েবিল চেকার ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের আগে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন হইছে ৩০ টাকা। আর আমাদের ভাড়া কত হবে তা সরকার নির্ধারণ করে দেয় নাই।’

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সার্ভিস হওয়ায় তাদের সাধারণ বাসের তুলনায় বেশি ডিজেল খরচ হয় বলে জানান তিনি।

বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে গত বুধবার থেকে মাঠে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুনর্নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার ৩৩৬টি বাসকে জরিমানা করেছে বিআরটিএ।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তারা ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করেন।

বাড়তি ভাড়া আদায় ও পরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ এবং অন্যান্য সংস্থার এই ভ্রাম্যমান আদালত ও তদারকি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে কত দিন চলবে তা জানাতে পারেননি তারা।

এসএইচ-১০/১২/২১ (অনলাইন ডেস্ক)