শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন শুরু

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার। প্রথম দফার তালিকায় এসেছে ১৯১ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা চূড়ান্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয় কোন পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই। আবার তালিকা নির্ধারণের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবীর পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা না থাকায় সেটাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নিহত ৩০ লাখ লোককে মুুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিহিত করা হয়েছে ‘গণশহীদ’। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে দেশের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসর আল বদর, আল শামস, রাজাকার বাহিনী। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কিন্তু দিবস থাকলেও বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয় কোন তালিকা নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৩ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এতে ১২২২ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম দফায় ১৯১ শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।

গত ২৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তালিকাটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কোন সংজ্ঞা ছিল না। মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ইতিহাসবিদ ব্যক্তিদের নিয়ে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে একটা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, বাকিটাও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাগুলো মূলত ঢাকাসহ বড় বড় শহর কেন্দ্রিক ছিল। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে নেই। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী তার খোঁজ নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাভুক্ত করার জন্য অনেকের পক্ষ থেকেই মন্ত্রণালয়ে আবেদন আসছে। এ জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা বা একটা মানদ- ঠিক করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে কারা বুদ্ধিজীবী মুক্তিযোদ্ধা হবেন।

শহীদ বুুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা অনুযায়ী যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারী ও বেসরকারী কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক, সঙ্গীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি; যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন। প্রাথমিকভাবে ১৯১ জনের তালিকা যেটা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত, সেই তালিকাটা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

এসএইচ-০১/১৪/২১ (অনলাইন ডেস্ক)