দেশের ৭১ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই ওমিক্রনের প্রভাব

দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাবে ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই রফতানি ও বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। একইসঙ্গে ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাড়তি খরচ গুণতে হয়েছে। এছাড়া ওমিক্রনের জন্য সার্বিকভাবে পুঁজি ও শ্রমের খরচ বেড়েছে ৮২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের।

সোমবার একটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপরে পরিচালিত সপ্তম পর্যায়ের জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে সানেম।

ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। করোনা অতিমারির সময়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে সানেম ধারাবাহিকভাবে তিনমাস অন্তর অন্তর এ জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপের এই পর্যায়ে বাংলাদেশের সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং ওমিক্রন ঢেউয়ের প্রভাব নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের ৩৮টি জেলার মোট ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ পরিচালিত করা হয়েছে। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ঔষুধ প্রস্তুতকারক, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলি জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেবা খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তাদের প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, আয়, ব্যবসার খরচ এবং বিক্রি বা রফতানি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাদের উত্তর শূন্য থেকে ১০০ এর একটি মানদণ্ডে পরিমাপ করা হয়েছে। যেখানে শূন্য মানে খুব খারাপ, ২৫ মানে খারাপ, ৫০ মানে কোনো পরিবর্তন নেই, ৭৫ মানে ভাল এবং ১০০ মানে খুব ভাল।

আলোচনায় বলা হয়েছে, ওমিক্রনের কারণে রফতানি কমার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ৮৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। এদিকে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে ওমিক্রনের জন্য অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং সে সংক্রান্ত খরচ বাড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। পুঁজি ও শ্রমের খরচ বাড়ার ঝুঁকির কথা জানিয়েছে ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

এদিকে জরিপে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবটিও উঠে এসেছে। ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে যানবাহনের খরচ বেড়েছে এবং ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে তাদের উৎপাদন শক্তির খরচ বেড়েছে।

আগের পর্যায়ের জরিপের মতই, এ পর্যায়ের জরিপেও দেখা গেছে যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, বন্ধক, দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যাংক-মক্কেল সম্পর্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরিভাবে মোকাবেলার জন্য ওয়েবিনারে খাতভিত্তিক স্বাস্থ্য-বিধি প্রণয়ন, টিকা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং সংক্রমণ রোধে গৃহীত নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে আরও বাস্তববাদী চিন্তা করার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে অধ্যাপক সেলিম রায়হান প্রণোদনা প্যাকেজের দ্রুত বিতরণ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোর দেন।

ওয়েবিনারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন পাওয়া এবং যোগান প্রবাহে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের প্রচার এবং ব্যাপক বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেওয়া হয়।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলে জানিয়ে অধ্যাপক রায়হান এক্ষেত্রে জ্বালানি তেল আমদানির ওপর কর কমানোর প্রস্তাব দেন।

এছাড়া তিনি বলেন, জ্বালানির মূল্যের জন্য নীতিনির্ধারকদের একটি কৌশলগত, গতিশীল এবং ভবিষ্যৎমুখী নীতি গ্রহণ করা দরকার।

প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী ধারা লক্ষ্য করে ওয়েবিনারে বলা হয়, প্রবাসী আয়ের ধারার একটি মূল্যায়ন করা দরকার। প্রবাসী আয়ের জন্য নির্ধারিত সরকারি প্রণোদনা ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ শতাংশ বাড়ানো দরকার।

জরিপে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মুদ্রানীতি ও ব্যয়নীতির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হয়। এছাড়াও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া জোরদারকরণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনভিত্তিক কর্মপন্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

এসএইচ-২০/০৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)