প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রকাশের দাবি

পরবর্তী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সার্চ কমিটিতে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের সদস্যরা৷

শনিবার নির্বাচন কমিশনারের খোঁজে গঠিত সার্চ কমিটির সাথে বৈঠকে এই দাবি জানান তারা৷ সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম পাঠাবে তাও প্রকাশের দাবি নাগরিক সমাজের৷

নাগরিক সমাজের সদস্যদের এ দাবির বিষয়টি সার্চ কমিটি ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানা গেছে৷

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে সার্চ কমিটির কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত মোট তিনশ ৩০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে৷

চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শনিবার সকাল থেকে দুই দফায় ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সাথে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে কথা বলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হসানের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি৷

আলোচনার দ্বিতীয় দফায় বিশিষ্ট সাংবাদিকদেরই প্রাধান্য ছিল৷ কমিটি রোববার দুপুরের পর আবারও বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে কথা বলবে৷

প্রথম দফায় আলোচনায় অশ নেয়াদের মধ্যে ব্রতীর শারমিন মুরশেদ বলেন, ‘‘আমরা নানা দিক থেকে মতামত দিয়েছি তবে একটি মতামত ছিলো কমন৷ তা হলো সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশনের জন্য যাদের নাম এসেছে তাদের সবার নাম প্রকাশ করা৷”

তিনি বলেন, ‘‘সার্চ কমিটি জানতে চেয়েছিলো, রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম পাঠানো হবে তাদের নাম কি না? আমরা বলেছি, যাদের নাম এসেছে সবার নাম৷ আর যেই ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করা হবে তাদের নামও আবার নতুন করে প্রকাশ করতে হবে৷’’

তিনি জানান, এগুলো এখনই অনলাইনে প্রকাশ করলে দেশের মানুষ তাদের ব্যাপারে তথ্য দেবেন৷ তাতে সার্চ কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে৷ আর এখন তথ্য পাওয়া অনলাইনে আরো অনেক সহজ৷

বৈঠকে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা মনে করেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের বেশিও নাম পাঠানো যায়৷ আর সেই নামের তালিকা প্রকাশ করা হলে রাষ্ট্রপতি কোন ধরনের লোক নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিলেন তা নাগরিকরা বুঝতে পারবেন৷

শারমিন মুরশেদ বলেন, ‘‘এর বাইরে আমরা বলেছি দেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনব্যবস্থা যখন সংকটের মুখে তখন এই সার্চ কমিটি কাজ করছে৷ তাদের কাজের উপর দেশের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নির্ভর করছে৷ তাই তারা যেন সৎ, যোগ্য এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোককে নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাব করেন৷’’

দ্বিতীয় দফা বৈঠকে উপস্থিতদের একজন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমিও প্রস্তাবিত সবার নাম আগেই প্রকাশের জন্য বলেছি৷ আমি মনে করি এতে স্বচ্ছতা বাড়বে৷ আর আমি নিজেও আট জনের নাম প্রস্তাব করেছি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যোগ্যতার ব্যাপারে বলেছি যে, নির্বাচন কমিশনে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তারা যেন সাহসী হন, সরকারের হুকুমে চলবেন না, তাবেদারি করবেন না, নিরপেক্ষ হবেন৷’’

আলোচনায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত জানান, ‘‘বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷ তাই যাদের নিয়ে প্রশ্ন নাই এবং প্রশ্ন উঠবে না এমন ব্যক্তিদের যেন কমিশনে নেয়া হয় ৷ তারা যেন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করেন৷’’

‘‘এর বাইরে আমি সংখ্যালঘু এবং নারীদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করেছি৷’’

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বৈঠক শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে নাম নেওয়ার কথা জানিয়েছিল সার্চ কমিটি৷ তবে বিএনপি কোনো নাম জমা দেয়নি বলে জানা গেছে৷

প্রস্তাবিত নাম থেকে সার্চ কমিটি নতুন কমিশন গঠনের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে৷ রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন৷

শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ দেবেন৷ আমি বলেছি প্রধানমন্ত্রী একটি দলের৷ তাই এখানে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷’’

এসএইচ-২২/১২/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)