দেশের যেসব স্থানে ঈদ উদযাপন হলো

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে চাঁদের অবস্থান জেনে এবং সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশে চাঁদ দেখার খবর পেয়ে শনিবার ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছেন ওই মুসল্লিরা।

সারা দেশে নারারণগঞ্জ, ঝালকাঠি, মৌলভীবাজার, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, নড়াইল জেলার শতাধিক গ্রামে পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা।

নারায়ণগঞ্জ: ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছেন ‘জাহাগিরিয়া তরিকার’ অনুসারীরা।

সকাল সাড়ে ৯টায় হজরত শাহ্ সুফি মমতাজিয়া এতিমখানা ও হেফজখানা মাদরাসায় ঈদের নামাজ পড়ে ঈদ উদ্‌যাপন করেন কয়েকশ মুসুল্লি। জামাতে ইমামতি করেন মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ। ঈদ জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মুসল্লিরা সকাল থেকেই আসা শুরু করেন।

ঈদের নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ও দেশবাসীর শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়। পরে সেখানে পশু কোরবানি ও মুসল্লিদের মধ্যে ঈদের খাবার বিতরণ করা হয়। একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলিও করেন তারা।

ঝালকাঠি: রাজাপুরের এক এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছে অর্ধশত পরিবার। সকাল পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহসংকর গ্রামে দারুস সু-ন্নাহ ঈদগাঁ ময়দানে আহালে হাদিস অনুসারিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তারা বাড়িতে পশু কোরবানি করেন।

দারুস সু-ন্নাহ ঈদগাঁ ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. রিপন হাওলাদার জানান, বাবা-দাদার সময় থেকেই সৌদির সঙ্গে মিলিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করছেন তারা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জালাল আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তারা প্রতিবছর সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্‌যাপন করেন।

শরীয়তপুর: জেলায় সুরেশ্বর দরবার শরিফ ভক্তরা ৩০ গ্রামে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সুরেশ্বরী ভক্তরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। সুরেশ্বর দরবার শরিফের গদিনশিন বেলাল নূরী ঈদের নামাজ পড়ান এবং খুতবা পাঠ করেন। এ সময় দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন কামাল নূরী। প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন সুরেশ্বরী ভক্তরা।

মৌলভীবাজার: সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে জেলার সার্কিট হাউস এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত। সকাল ৭টায় জেলার সার্কিট হাউস এলাকায় ওই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এ ঈদ জামাতের ইমামতি করেন আলহাজ্ব আব্দুল মাওফিক চৌধুরী। এতে নারী-পুরুষসহ শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতীর কল্যাণে মোনাজাত করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউস এলাকায় এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

পটুয়াখালী: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন পটুয়াখালীর ২৭ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।

সকাল সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে তারা বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি দেন। বদরপুরে ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন দরবার শরিফের প্রধান সৈয়দ আরিফ বিল্লাহ রাব্বানী (নহুজুর)।

বদরপুর দরবার শরিফসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কলাপাড়া, গলাচিপা এবং বাউফলের ২৭টি গ্রামে একইভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়ভাবে তারা চট্টগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া এবং চানটুপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এদিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পীর মাওলানা মোহাম্মদ মোকলেসুর রহমানের অনুসারীরা প্রায় ৯৪ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে সংগতি রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ ইসলাম ধর্মীয় যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। জেলার ৩৭ গ্রামের মধ্যে রয়েছে গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরী বুনিয়া, নিজ হাওলা, কানকুনি পারা, মৌডুবি, বাউফলের মদনপুরা, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদি, চন্দ্রপাড়া, দ্বিপাশা, শাপলা খালী, কনকদিয়া, আমিরাবাদ, কলাপাড়ার নিশানবাড়িয়া, ইটবাড়ীয়া, শহরের নাঈয়া পট্টি, টিয়াখালী, তেগাছিয়া, দক্ষিণ দেবপুর।

জামালপুর: সরিষাবাড়ি উপজেলার ১৬টি গ্রামের আংশিক মানুষ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছেন।

সকাল ৮টায় সরিষাবাড়ি পৌরসভার বলারদিয়ার মধ্যপাড়া মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদ মাঠে পবিত্র ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলারদিয়ার, মূলবাড়ি, সাতপোয়া, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, বাউসি, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুঠিয়ারপাড় ও বগারপাড় গ্রামের দুই শতাধিক নারী ও পুরুষ অংশ নেন। বলারদিয়ার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন ইমামতি করেন।

ঈদের নামাজ পড়তে আসা ফজলু মিয়া, আলতাফুর, মামুন, দুলাল, মোমিন বলেন, ১৯৮৬ সালে মিশরের কায়রোতে প্রায় সব মুসলিম দেশের ওলামা-আলেম একত্র হয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন, যে দেশেই আগে ঈদের চাঁদ দেখা যাক না কেন, তারা সৌদি আরবকে অবগত করবে। তারপর সব মুসলিম দেশেই একযোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মূলত তখন থেকেই আমরা এ নিয়ম অনুসরণ করে আসছি।

পৌরসভার বলারদিয়া এলাকার আজিম উদ্দিন মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদ মাঠে প্রতিবছরই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ থেকে ১৬টি গ্রামের মানুষ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

ঝিনাইদহ: প্রতিবছরের মতো এবারও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর ১০ গ্রামের শতাধিক পরিবার ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছে। সকাল ৮টায় শহরের উপজেলা মোড় এলাকায় কামরুল হাসান দুলদুলের মিল চাতাল, ভালকি কুটিরপাড়া জামে মসজিদ ও নিত্যনন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ তিনটি স্থানে পৃথকভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলার হরিণাকুণ্ডু, দখলপুর, ফলসী, বৈঠাপাড়া, বলরামপুর, কুলবাড়িয়া, ভালকি, চটকাবাড়িয়া, নিত্যনন্দপুরসহ ১০টি গ্রামের শতাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এসব ঈদ জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম, ইমদাদ হোসেন ও হাফেজ নোমান।

নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের নেতা আ ন ম বজলুর রহমান জানান, ১৫ বছর ধরে তারা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করছেন। প্রথমে তারা একটি স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করলেও বিগত তিন বছর ধরে উপজেলার তিনটি স্থানে আলাদাভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট: কালীগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়নের চার গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন পাঁচ শতাধিক মুসল্লি।

সকাল ১০টার দিকে উপজেলার মুন্সিপাড়ায় জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল হামিদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি চর, তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট ও একই ইউনিয়নের বোতলা এলাকায় এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসূল জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে অনেক আগে থেকে কাকিনা, তুষভান্ডার ও চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কিছু মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন। এদিকে প্রতিবার ঈদের জামাত মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠে সরকারি নির্দেশনা মেনে মসজিদে জামাত আদায় করেছেন মুসল্লিরা।
মুন্সীপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাজেদুল বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব মুসল্লি জামাত আদায় করেছি। সকাল ১০টায় পবিত্র ঈদুল আজহা নামাজের প্রথম জামাত শুরু হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলার হাড়িশহরের মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি মাওলানা মাছুম বিল্লাহ্ বলেন, সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ হবে। এ বিশ্বাস থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কয়েক বছর ধরে এ এলাকার মানুষ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবেকদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।

এসএইচ-০৪/০৯/২২ (অনলাইন ডেস্ক)