একটু মাংস নিতে দ্বারে দ্বারে ছিন্নমূল মানুষ

কখনো খালি হাতে, কখনো দু-এক পিস বা হাত ভরে পাচ্ছেন কোরবানির মাংস। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে এভাবেই মাংস সংগ্রহ করছেন রাজধানীর ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে আগের থেকে মাংস দেয়ার পরিমাণ কমেছে বলে অভিযোগ তাদের। অনেকে সংগ্রহ করা এসব মাংস আবার বিক্রি করে দেন ক্ষণস্থায়ী কিছু হাটে। সেখান থেকে যারা কোরবানি দিতে পারেনি তারা এবং কিছু হোটেল ব্যবসায়ীরা এ মাংস কিনে নেন।

রাজধানীর কাঠালবাগানে কোরবানির মাংস নিতে আসা ষাটোর্ধ মোজাফফর জানান, তার মতো নিম্ন আয়ের অনেকেই ব্যাগ হাতে ঘুরছেন বাড়ি বাড়ি। কেউ মাংস দিচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন শেষ। তবে মাংস আগের মতো পাচ্ছেন না বলে দাবি তার। তিনি জানান, যারা মাংস দিচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই খাওয়ার মতো ভালো মাংস দিচ্ছেন না।

আর কোরবানিদাতারা বলছেন, গরিবদের মাংস দেয়ার মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন তারা। কারণ, তাদেরও এসব মাংসে অধিকার রয়েছে। তাই সর্বোচ্চ ভালো মাংস দেয়ার চেষ্টা থাকে। তবে, অনেকেই শেষ সময়ে আসার কারণে ভালো মাংস দেয়া সম্ভব হয় না বা শেষ হয়ে যায়।

তবে, আগের তুলনায় মাংস গ্রহিতা অনেক বেড়েছে বলেও জানান কোরবানিদাতারা। এমনই একজন পুরান ঢাকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান। বহু আগে থেকেই তিনি ঢাকাতেই কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রাতিক বছরগুলোতে গরিব মানুষ অনেক বেশি আসছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আগে সারাদিনে ১৫ থেকে ২০ জন লোক আসত মাংস নিতে। এখন দল বেধে মানুষ আসে মাংস নিতে। দেখা যায় এমন দু’তিন গ্রুপকে মাংস দেয়ার পরই শেষ হয়ে যায়।’

এদিকে সংগ্রহ করা এসব মাংস খাওয়ার পাশাপাশি অনেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি করেন নগদ অর্থে। এবারও দেখা গেল সেরকম কিছু চিত্র। শহরের অলিতে-গলিতে অস্থায়ী এ বাজারে খুব কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, জুরাইন রেলগেট, সূত্রাপুর, ধোলাই খাল, মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও, রামপুরা ব্রিজ, লিংক রোড, নতুন বাজার, নাখালপাড়া রেল লাইনে এ দৃশ্যের দেখা মেলে। মূলত সকাল থেকে ভিক্ষুক এবং গরিব-অসহায় মানুষ বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে যে মাংস সংগ্রহ করেছেন সেটাই তারা এসব স্থানে বিক্রি করছেন তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজিতে। ।

রাজধানীর ফার্মগেটে বিক্রির উদ্দেশে কয়েক ভাগ মাংস সাজিয়ে ফুটপাতে বসে আছেন মৌসুমী কসাই আমান মিয়া। তিনি জানালেন, কোরাবানির মাংস কাটার পর নিজের ও তার দলের পাওয়া মাংসের ভাগ একত্রিত করেই বিক্রির জন্যে বসেছেন। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা হওয়াও মাংস নিতে নিতে নষ্ট হয়ে যাবে, তাই এসব বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

কোরবানির মাংসের এই বিক্রেতা আরও জানালেন, ঢাকায় একটি ফুড ফ্যাক্টরির শ্রমিক তিনি। কোরাবানির সময় মৌসুমী কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করেন। গত তিনচার বছর ধরেই কোরাবানির ঈদে বিকেল থেকে সন্ধ্যা তিনি ফার্মগেটে মাংসের পসরা নিয়ে বসেন। দাম চাচ্ছেন ৪০০ টাকা কেজি, তবে ৪৫০ টাকা দাম বললে বিক্রি করছেন।

কোরবানির মাংসে অধিকার রয়েছে নিজের, আত্মীয়স্বজন ও গরিব-মিসকিনদের। সেক্ষেত্রে মাংস কতটুকু সঠিকভাবে বণ্টন করছেন কোরবানিদাতারা এবং এসব মাংস বেচাকেনা শরিয়তসম্মত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এসএইচ-০১/১০/২২ (অনলাইন ডেস্ক)