বাংলাদেশে রফতানি সীমা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে ভারত

প্রতি বছর কী পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশে যাবে, এবার তা নির্দিষ্ট করে দিতে যাচ্ছে ভারত। আসছে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সফরেই আসতে পারে ভারতে কোটা সুবিধা পাওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, সংকটের সময়ে দুই দেশের অবস্থান কী হবে সেটিকে অগ্রাধিকার দিয়েই চুক্তির আলোচনায় যাবে বাংলাদেশ। আর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও, দেশের কৃষক ও কৃষি যেন ঝুঁকিতে না পড়ে তা নিশ্চিতের আহ্বান অর্থনীতিবিদদের।

একে তো বিশাল অর্থনীতি, তার ওপর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশি। এই দুই কারণে চাল, গম, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশকিছু পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কম হলে কিংবা নিজ দেশে এসব পণ্যের দাম বাড়লে, বিভিন্ন সময় রফতানি নিষিদ্ধ করে ভারত। এতেই বাংলাদেশ পড়ে তীব্র সংকটে।

এবার এ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হয়েছে দুই দেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশের জন্য রফতানিযোগ্য পণ্যের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিতে যাচ্ছে ভারত। চলতি বছরই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যা চূড়ান্ত হতে পারে। যদিও আমদানিকারকরা বলছেন, বাণিজ্যে চলমান বৈষম্য দূর করা না গেলে কাজে আসবে না কোটা সুবিধা। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে হঠাৎ পণ্য রফতানি বন্ধের প্রবণতা।

এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ‘গমের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় ভারত আমাদের গম দিচ্ছে না। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে, পেঁয়াজ দেয় না। আবার হঠাৎ করে অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেটা দেয় না। তবে সরকার যদি কোটা সুবিধা করে দেয়, তাহলে আমাদের আর এ সমস্যায় পড়তে হবে না।’

তবে অ্যান্টি ডাম্পিং ট্যারিফের মতো বাধা দূর করার সঙ্গে চুক্তির কারণে দেশের কৃষিখাত যেন বিপাকে না পড়ে তা নিশ্চিতের আহ্বান অর্থনীতিবিদদের।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘কৃষিপণ্যের জন্য কোনোভাবেই বিদেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। যদিও কোটা আমাদের একটা নিশ্চয়তা দেবে। কিন্তু আমি মনে করি, এর পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের জন্য যেকোনো ধরনের নীতি সহায়তা থেকে শুরু করে কৃষিতে সহায়তা দেয়া দরকার। অর্থাৎ সরকারের উচিত হবে কৃষকদের সব ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া।’

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলছেন, যে কোনো সংকটে দুই দেশের বাণিজ্য যেন ভারসাম্যহীন হয়ে না পড়ে, সেই আলোচনায় গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই তার জাতীয় স্বার্থটা দেখে। ধরুন, তাদের দেশে পেঁয়াজ কম উৎপাদন হলে, তারা রফতানি বন্ধ করে দিল। আবার আমাদের দেশে যখন বেশি উৎপাদন হলো, আমরাও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিলাম। সুতরাং এটাই হয়। প্রত্যেকেই নিজস্ব স্বার্থ দেখে। তবে আমরা চাই, সেটা নিয়ে আলোচনা হোক, যে আমাদের যাদের যখন যা বিপদ হবে বা সমস্যা হবে, এক দেশ আরেক দেশের পাশে থাকব।’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালেই ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে ভারত থেকে মোট আমদানির পরিমাণ, বিপরীতে দেশটিতে বাংলাদেশ পাঠিয়েছে মাত্র ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য।

এসএইচ-০৩/১৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)