জেলহত্যা মামলার রায় কার্যকর কবে?

এক বছর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, সরকার ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার জেল খানায় হত্যার ঘটনার বিচারের রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে৷ আর যারা পলাতক আসামি রয়েছেন তাদের আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি৷ যখন আসামিদের নিজেদের আওতায় পাবো তখনই ফাঁসির রায় কার্যকর হবে৷

নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন কারাগারে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা জানান৷ তবে রায় কার্যকর করার জন্য দৃশ্যত কোন উদ্যোগ নেওয়া করা হয়নি৷

এমন বাস্তবতায় আগামীকাল ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস পালিত হবে৷

১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷

তারা ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর খুনিচক্র কারান্তরালে চার নেতাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা একটি কালো অধ্যায়৷

হত্যাকাণ্ডের পরদিন তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজনস) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় মামলা করেন৷ কিন্তু ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়৷ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে৷

তদন্ত শেষে সিআইডি ১৯৯৮ সালের ২০ অক্টোবর ২০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন৷ এরপর ৬ বছরের বেশি সময় চলে বিচারকাজ৷ জেলহত্যার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন৷

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কেএম মহিউদ্দিনকে খালাস দেন৷ তবে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি হিসাবে এ চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷

এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট এক রায়ে শুধু রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন৷ আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধা এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়৷

হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এ চারজনের ফাঁসি কার্যকর হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়৷

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়৷ ফাঁসির তিন আসামির মধ্যে শুধু দুজনকে খালাস দেওয়ায় রায়ের ওই অংশটির বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ৷

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেল হত্যা মামলার আসামি সাবেক হাইকমিশনার খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়ায় আটক করা হয়৷

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০০৪ সালে জেল হত্যা মামলা থেকে খালাস পান৷ ২০০৫ সালে তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ পান৷ পরে ২০০৭ সালের আগস্টে তাকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়৷

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করে মালয়েশিয়ায় থেকে যান৷

পরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া শরণার্থী মর্যাদায় খায়রুজ্জামান মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন৷ জানা গেছে, খায়রুজ্জামান এখন শরণার্থী হিসেবে ইউএনএইচসিআরের যে কার্ডটি ব্যবহার করেন, সেটি ২০২০ সালের মার্চে তাকে দেওয়া হয়৷ তাকে দেওয়া কার্ডটির মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত৷

তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখমুখি করা হবে বলে সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷

এসএইচ-১০/০২/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : ডয়চে ভেলে)