তালগাছ রোপণের মতো ব্যর্থ আরও একটি প্রকল্প!

দেশে প্রতিবছর বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। প্রাণহানি কমাতে এখনও নেই কার্যকর বাস্তবায়ন। তালগাছ রোপণ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর এবার নতুন করে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছে সরকার। যদিও এ প্রকল্পের ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃষ্টির সময় আকাশ ফুঁড়ে ভূমিতে নেমে আসা আলোর ঝলকানি অর্থাৎ বজ্রপাত বা বিজলি দেখতে সুন্দর হলেও এই আলোর বিনাশক্ষমতা অনেক বেশি। কেননা, বজ্রপাতের তাপমাত্রা ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের জলীয় বাষ্প এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আর ভূমির শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় দেশে বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। সাধারণত যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, সেসব এলাকায় সৃষ্ট মেঘ থেকে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এতে বেশ ক’বছর ধরে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও জীবনহানি কমাতে এখনও নেই কার্যকর বাস্তবায়ন।

সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৪২২ জনের। এর মধ্যে গত বছর ৩৩৭ জন এবং চলতি বছর এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৮৫ জন। গেল মঙ্গলবার এক দিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপনের কাজ শুরু করেছে সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ১৫টি জেলার ১৩৫টি উপজেলা বজ্রপাতপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

তবে এ উদ্যোগকে তালগাছ রোপণের মতো পুরোপুরি অকার্যকর বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন তালগাছ রোপণের মতো পুরোপুরি ব্যর্থ ও অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপনের মাধ্যমে কার্যকর ফল আসবে না।

কানাডায় বসবাসরত আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘১৫ মিটার উঁচু টাওয়ারের ওপর যদি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়, তাহলে সেটি তার চারপাশের ৩০ মিটার ব্যাসার্ধের এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে পারবে।’ ফলে এটিকে পুরোপুরি একটি অপচয় হিসেবে উল্লেখ করে একমাত্র ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ সিস্টেমের মাধ্যমে আগাম সতর্কবার্তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়াসহ বজ্রপাতের আগেই জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শ দেন তিনি।

একই সুরে কথা বলেন আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসানও। তার মতে, যতই বজ্র নিরোধক বসানো হোক-না কেন, খুব একটা কাজ হবে না। কারণ, পুরো দেশের সব জায়গায় এটি বসানো সম্ভব নয়। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘বজ্র নিরোধক দণ্ডের আওতা খুব কম। ফলে সরকার যেভাবে চিন্তা করছে তাতে মানুষকে রক্ষা করতে দু-চার বাড়ি পরপর এই দণ্ড বসাতে হবে। কিন্তু সেটি তো সম্ভব নয়। ফলে এই প্রকল্প কোনো কাজে আসবে না।’

কামরুল হাসান বলেন, ‘বজ্রপাত কখন হবে, কোন এলাকায় হবে সেটি আগে থেকে বোঝা সম্ভব। সরকারকে সেই প্রযুক্তির দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে হবে। এতে বজ্রপাতের আগেই জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে আনা সহজ হবে।’ এ জন্য প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে সচেতনতা শুরু করতে পরামর্শ দেন তিনি।

যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ সিস্টেমের মাধ্যমে ৪০ মিনিট আগে সতর্কবার্তা দেয়াসহ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী।

এসএইচ-১০/২৯/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সময়)