একই অপরাধে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তি। ভিন্ন শাস্তি কি বলছেন! লিওনেল মেসি ও কেপা আরিজাবালাগার ক্ষেত্রে বৈষম্যটা আর বেশি। যে অপরাধ করে নিঃশর্ত মাফ পেয়েছিলেন মেসি, সেই একই অপরাধ করে কেপার ভাগ্যে জুটল সমালোচনা, তিরস্কার, শাস্তি। এমনকি চেলসির এই স্প্যানিশ গোলরক্ষককে গুণতে হচ্ছে জরিমানার টাকাও।
গত রোববার ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ইংলিশ লিগ কাপ বা কারাবাও কাপের ফাইনালে কোচের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান চেলসির গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগা। ওই ঘটনার পর থেকেই গুরুতর এই অপরাধের জন্য সমালোচনার তীরে বিদ্ধ স্পেনের এই তরুণ গোলরক্ষক। তবে শুধু তিরস্কার-সমালোচনায় পাড় পেলেও কথা ছিল। কেপার ভাগ্যে এলে শাস্তিও। সেই শাস্তিটাও আবার এসেছে দুভাবে।
ক্লাব চেলসির পক্ষ থেকে করা হয়েছে জরিমানা। কেপার এক সপ্তাহের পারিশ্রমিক কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চেলসির কর্তারা। ক্লাব কর্তাদের এই দণ্ডও চেলসির ইতালিয়ান কোচ মরিসিও সারিকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। দলের অন্য খেলোয়াড়দের বার্তা দিতে তিনি নিজেও কেপাকে বিশেষ শাস্তি দিয়েছেন।
গতকাল রাতেই টটেনহামের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল চেলসির। নিজেদের ঘরের মাঠ স্টাম্পফোর্ড ব্রিজের এই ম্যাচে কোচ সারি শাস্তি হিসেবে কেপাকে বসিয়ে রাখেন বেঞ্চে! অথচ ২০১৪ সালে ঠিক একই অপরাধ করে মেসি নিঃশর্ত ক্ষমা পেয়ে যান। শাস্তি, জরিমানা দূরের কথা, মেসিকে সেভাবে সমালোচনাও সইতে হয়নি।
বার্সেলোনার তৎকালীন কোচ লুইস এনরিকে শিষ্যের ওপর চোখ গরম কথাও বলেনি। উল্টো বদলি হিসেবে তুলে ডান দিলে মেসিই কোচের ওপর চোখ গরম করেন। এবং মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। ঘটনাটা এইবারের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে। বার্সেলোনা তখন ৩-০ গোলে এগিয়ে। দলের নিশ্চিত জয় জেনেই ৭৫ মিনিটে মেসিকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কোচ এনরিকে।
কিন্তু ঠিক এর আগের মিনিটেই গোল করা মেসি কোচের কথা শোনেননি। উল্টো বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে কোচের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। চোখ গরম করে বুঝিয়ে দেন, মাঠে সব কিছুই ঠিক আছে। তার মাঠ ছাড়ার দরকার নেই! কোচ এনরিকে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। মেসির পরিবর্তে নেইমারকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান মুনির আল হাদ্দাদিকে।
কোচের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেসি খেলেন পুরো ম্যাচ। তবে ম্যাচের পর পরই ঘটনা ওখানেই মাটিচাপা দিয়ে ফেলেন এনরিকে। বিষয়টি নিয়ে মেসিকে কোচ বা ক্লাবের পক্ষ থেকে কোনো তিক্ত কথাই হজম করতে হয়নি! তিনি মেসি বলেই হয়তো এনরিকে ঘটনা আর বড় করেননি। নিজেই সবুর করেন, মেনে নেন শিষ্যের চোখ রাঙানি!
কিন্তু কেপা তো আর মেসি নন যে, তাকে সহজেই ছেড়ে দিবেন সারি! তাই কেপাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে ভবিষ্যতে এমন ‘বেয়াদবি’ আর কখনো না করেন। শুধু কেপাকে নয়, তাকে ম্যাচ-দণ্ড দিয়ে সারি আসলে চেলসির অন্য খেলোয়াড়দেরও শিক্ষা দিয়েছেন। স্কোয়াডের মধ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, কোচের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে শাস্তি নিশ্চিত। কেউ রেহাই পাবে না।
গত রোববার কারাবাও কাপের ফাইনালটি নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও গোলশূন্য ড্র থাকে। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়াচ্ছে জেনেই শেষ দিকে গোলরক্ষক কেপাকে তুলে নিয়ে পেনাল্টি স্পেশালিস্টে উইলি ক্যাবায়েরোকে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন চেলসি কোচ সারি।
কিন্তু কেপা কোচের সিদ্ধান্ত অমান্য করে থেকে জান মাঠেই। গতকাল সেই কেপা কোচের শাস্তি মাথায় নিয়ে বসে থাকলেন বেঞ্চে। তার পরিবর্তে খেললেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক উইলি ক্যাবায়েরো। কোচের এই সিদ্ধান্ত সফলও হয়েছে। টটেনহামের বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছে চেলসি। ক্যাবায়েরো চেলসির জালকে রেখেছেন অঁক্ষত। ভুল করেও জালে বল জড়াতে দেননি।
এসএইচ-১২/২৮/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)