বার্সা ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করেও মেসির বিকল্প পায়নি

গত এক যুগ ধরে ফুটবল বিশ্বকে মাত করে রেখেছেন তার পায়ের কারিকুরি দিয়ে। বিশ্বকাপ ছোঁয়া ছাড়া এমন কোনো কাজ আর বাকি নেই যা তিনি পা দিয়ে অর্জন করেননি। ছোট্ট শরীরের একটি ছেলে ২০০৫ সালে ফুটবল মাঠে নেমে ফুটবলকে দিয়েছেন অনন্য শিল্পের নিদর্শন।

ফুটবলের জন্য কি করা আর বাকি আছে লিওনেল মেসির! বলতে গেলে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে। তার পায়ের কারুকার্য, রেকর্ড-সব কিছু বিবেচনায় আর্জেন্টাইন খুদেরাজকে অনেকেই ‘সর্বকালের সেরা’ হিসেবে মানেন। অনেকেই মনে করেন-অবসরের পর মেসি থাকবেন পেলে, ম্যারাডোনার কাতারেই।

গেলো সপ্তাহে বার্সেলোনা সমর্থকরা আরও একবার টের পেলেন লিওনেল মেসিকে ছাড়া তাদের দল কতটা অসহায়। যেখানে হারে শুরু করতে হয়েছে কাতালানদের লা লিগা মৌসুম। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোল হজমে ১-০ ব্যবধানের পরাজয়। তাও আবার ৩৮ বছর বসয়ী বুড়ো আর্তিজ আদুরিজের গোলে।

১৪ বছর ধরে বার্সাকে সার্ভিস দেওয়া মেসি বরাবরই দলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় এতদিন পরও তার বিকল্প হিসেবে কেউই গড়ে ওঠেনি। এমনকি দলের রেকর্ড সাইনিং হওয়ার পরও।

কাতালুনিয়ার ক্লাব বার্সার ইতিহাসে তিন সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার (ট্রান্সফার ফি’র হিসেবে) ওসমানে দেম্বেলে, ফিলিপ্পে কুতিনহো ও আঁতোয়া গ্রিজম্যান। কিন্তু তারা সেভাবে কাজে আসেননি। দেম্বেলে ও কুতিনহো গত দু’বছর ধরে খেললেও সফলতা পাননি। অন্যদিকে গ্রিজম্যান মাত্রই দলের সঙ্গে যোগ দিলেও স্প্যানিশ মিডিয়াগুলো জানাচ্ছে, চলে যাওয়া নেইমারের শূন্যস্থানও পূরণ করতে পারবে না এই ফ্রেঞ্চ তারকা।

লিভারপুলের সাবেক মিডফিল্ডার ও ব্রাজিলিয়ান তারকা কুতিনহোকে অবশ্য ইতোমধ্যে ধারে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তানুযায়ী আগামী মৌসুমে পাকাপাকিভাবে তিনি বাভারিয়ানদের হয়েই খেলবেন। কিন্তু দেম্বেলের ব্যাপারে এখনও কিছু পরিস্কার হয়নি। কেননা প্রথম থেকেই এই ফরাসি স্ট্রাইকার ইনজুরি ও অনিয়মের সঙ্গে বসবাস করছেন।

২০১৭ সালে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নেইমার বার্সা ছাড়লে, আগমন ঘটে কুতিনহো ও দেম্বেলের। তবে তারা কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি এটা বলাই যায়।

ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য দেম্বেলের স্কিল নিয়ে অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই। বার্সার আগে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে তার দারুণ পারফরম্যান্সই তাকে নেইমারের জায়গায় নিয়ে আসে। তবে ক্যাম্প ন্যু যেন তাকে আপন করতে পারেনি।

অনেক যুদ্ধ করে লিভারপুল থেকে আসা কুতিনহো ১৪০ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সা আসলে, সেটি সেসময় তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ফুটবলারের পরিণত করে। আর দেম্বেলে আসেন ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে। এই মৌসুমে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ থেকে গ্রিজম্যান এসেছেন ১২০ মিলিয়ন ইউরোতে। ইতোমধ্যে জেনিতে বিক্রি করে দেওয়া ম্যালকমকে বোর্দে থেকে নেওয়া হয়েছিল ৪১ মিলিয়ন ইউরোতে।

বার্সেলোনার আক্রমণভাগের চার খেলোয়াড়ের মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার ৭৩২ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২০) বেশি হলেও, পারফরম্যান্সের বিচারে তারা কেউই মেসির কাছে যেতে পারেননি। ফলে রয়ে যায় সেই মেসি-নির্ভরতা।

অবশ্য তাদেরকে বাজে খেলোয়াড় বলা যাবে না। এমনকি গ্রিজম্যানের সম্পর্কে এত আগাম বলাটাও ঠিক হবে না। তবে যদি বলা হয় মেসির সঙ্গে তার ব্যবধান কতটা, তাহলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

পেশির ইনজুরির কারণে প্রাক মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে পারেননি মেসি। সেই চোট বয়ে বেড়াচ্ছেন এখনও। বিলবাওয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ মিস করার পর এবার রিয়াল বেতিসের বিপক্ষেও থাকছেন না তিনি। তাইতো ২০০৮-০৯ মৌসুমের পর আসরের শুরুর দিকে টানা দুই ম্যাচে হারের শঙ্কাতেও রয়েছে বার্সা।

এসএইচ-১৫/২৫/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)