এ দেখাই শেষ দেখা নয়

ছোট্ট কৌশিক; চোখেমুখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। বয়স বড়জোর সাত-আট হবে। তখনই তো পাড়ার মাঠে টেপ টেনিস বল হাতে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াত। কখনো সহপাঠীর সাথে, কখনো আবার পাশের বাড়ির বন্ধু। কখনো বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে, কখনো আবার শিক্ষকের। এভাবেই চলে ক্রিকেটের সাথে তার দারুণ প্রেম।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে প্রেম বাড়ে আরও দ্বিগুণ। হয় পরিণত। একটা সময় নড়াইলের গণ্ডিও পেরিয়ে যাওয়া। এরপর বয়ঃভিত্তিক টিম হয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া। একদিন আবার নিজের কাঁধেই পুরো দলের দায়িত্বভার নেওয়া। অবশেষে ওই দায়িত্ব’কেও বিদায় বলা। তবে এ দেখাই শেষ দেখা নয়!

এত সহজে তার ক্যারিয়ারের বর্ণিল সময় বললেও কুড়ি বছরে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেছেন আজকের মাশরাফি। ৮ নভেম্বর। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল এক দিন। সেদিন লাল-সবুজের জার্সিতে পথচলা শুরু হয় মাশরাফি বিন মর্তুজা নামের এক মহানায়কের। ২০০১ থেকে ২০১৯। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৮টি বছর পার করলেন এই টাইগার সুপারস্টার। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তার সঙ্গী হয়েছে অসংখ্য আনন্দ-বেদনা।

বয়স তখন ১৮ ছুঁইছুঁই। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ২২ গজে প্রথম পা পড়ে মাশরাফির। পেসার মাশরাফির শুরুটা হয়েছিল ব্যাট হাতে। প্রথম দিন ৪৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ২২ বল থেকে করেছিলেন ৮ রান। এরপর বল হাতে ১০৬ রানে তুলে নেন ৪টি উইকেট। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাশরাফিকে। দুর্বার গতিতে এগোতে থাকেন। ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায়। ক্রিকেটের দুটি অধ্যায়ে নেই তার বিচরণ। তবুও রেখে গেছেন মনে রাখার মতো বিশেষ কিছু।

টেস্ট ক্যারিয়ার ৩৬টি ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফি। নিয়েছেন ৭৮টি উইকেট। গড় ৪১.৫২, ইকনোমি রেট ৩.২৪ করে। রান করেছেন ৭৯৭। ওয়ানডে খেলেছেন ২২০ ম্যাচ। উইকেট শিকার করেছেন ২৭০টি। সেরা বোলিং ফিগার ২৬ রানে ৬ উইকেট। বিপরীতে রান করেছেন ১৭৮৭। আর টি-টুয়েন্টিতে ৫৪ ম্যাচ থেকে নিয়েছেন ৪২ উইকেট। রান ৩৭৭। পাশাপাশি ক্যাপ্টেন হিসেবেও তিনি সফল। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জিতেছে বহু ঐতিহাসিক ম্যাচ।

ওয়ানডেতে মোট ৮৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। এই ৮৮ ম্যাচে বাংলাদেশ দল জিতেছে ৫০ ম্যাচ, হেরেছে ৩৬টি। বাকি দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে এতো ম্যাচ জেতাতে পারেননি আর কোনো অধিনায়ক।

দুই নম্বরে থাকা হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে ৬৯ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ২৯টিতে। আর জয়ের শতকরা হার, সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডেও অন্য অধিনায়কদের চেয়ে এগিয়ে মাশরাফি। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে ৮৮ ম্যাচ খেলে ১০২ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। রান করেছেন ৫৭৮।

১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন মাশরাফি। বাবা গোলাম মর্তুজা আর মায়ের নাম হামিদা মর্তুজা। মা-বাবা আদর করে কৌশিক নামে ডাকতেন মাশরাফিকে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি টান ছিল তার। ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন তিনি। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের প্রতিও ভালোবাসা জন্মে তার। এভাবেই হয়ে যান ‘নাম্বার ওয়ান’।

এসএইচ-০৩/০৭/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)