বাংলাদেশে সব ঘরোয়া খেলা স্থগিত

ঢাকায় আজও চলছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট, বাংলাদেশের নানা শহরে চলছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। রোববার শেষ হয়েছে স্কুল হকি টুর্নামেন্ট, ওদিকে ঢাকায় চলছে জাতীয় পর্যায়ের যুব দাবা প্রতিযোগিতা।

সোমবারও বিকেলে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পরামর্শ দেয় ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব ধরণের ঘরোয়া খেলা স্থগিত, এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে সব আন্তর্জাতিক খেলা।

পাশের দেশ ভারতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মতো আসর শুরুর আগেই স্থগিত করা হয়েছে, ভারতের ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টও বন্ধ। শুধু তাই নয়, ক্রিকেটে ভারত থেকে দেশে ফিরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে গেছে নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে গেছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল। তিনটি দলই লম্বা সময়ের প্রস্তুতি নিয়েই সফরে আসে।

অস্ট্রেলিয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে শেফিল্ড শিল্ড ক্রিকেট আসর। শুধুমাত্র পাকিস্তানে পাকিস্তান সুপার লিগ চলছে, যার শেষ ম্যাচটি অর্থাৎ ফাইনাল বৃহস্পতিবার।

ফুটবলের স্থগিতাবস্থা আরও বেশি দৃশ্যমান। ইংল্যান্ডে, স্পেনে, ইতালিতে বন্ধ রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সব ধরণের লিগ। ইউরোপীয়ান টুর্নামেন্টগুলোও স্থগিত অন্তত এপ্রিল মাসের তিন তারিখ পর্যন্ত।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে অলিম্পিক হওয়া নিয়ে আশাবাদ দেখানোর পর তাকে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে, এরপর তিনি অলিম্পিক হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি অলিম্পিক কমিটির ওপর ছেড়ে দেন। শুধু রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে লিগ খেলা চলছে এখনও।

বিশ্বের সকল ক্রীড়া কর্মকাণ্ড যখন স্থগিত এবং সামনের দিনগুলোর ক্রীড়া ইভেন্টগুলোও স্থগিত করার কথা ভাবা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের ইভেন্টগুলো চলছিল সাড়ম্বরে।

রোববার শুরু হয় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দিনের খেলা, যেখানে আবাহনী ও পারটেক্স গ্রুপের মধ্যে একটি ম্যাচ হয়। এই ম্যাচে দেখা যায় করোনাভাইরাসের জন্য যেসব আদবকেতা মানার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেগুলো ঠিকমতো মানেননি ক্রিকেটাররা।

মুশফিকুর রহিম শতক হাকানোর পর জড়িয়ে ধরেন অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে। মাঠে নিয়মিত হাত মেলান ক্রিকেটাররা।

মুশফিক অবশ্য ম্যাচ শেষে বলেন, এসব আচরণ হুট করে পরিবর্তন করা কঠিন, যেহেতু অনেক দিনের অভ্যাস।

তিনি বলেন, একজনের হলে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারে। আমি মনে করি, তাদের অবশ্যই সচেতন থাকা উচিত। তারা যদি আমাদের ভালোবাসতে পারে, আমাদেরও তাদেরকে ভালোবাসা উচিত। আমার অনুরোধ থাকবে, সবাই যেন সচেতন থাকেন।

বাংলাদেশের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সরকারি কোনও নির্দেশনার আগে কোনও সিদ্ধান্ত নিবে না ক্রিকেট বোর্ড।

তিনি বলেন, আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ইস্যু সবার জন্যই। শুধু আমাদের ব্যাপার না।

তবে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, অনেক জায়গায় ঘরোয়া ক্রিকেট চলছে।

এরই মধ্যে সোমবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দেশটির ঘরোয়া ওয়ানডে লিগ বন্ধ ঘোষণা করেছে। ২৫শে মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা এই আসর।

বাংলাদেশে খেলা চালিয়ে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে পাপন বলেন, বাংলাদেশের ডমেস্টিক খেলায় এমনিতেও দর্শক হয় না।

করোনাভাইরাসের সতর্কতার অংশ হিসেবে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ছুটি থাকাকালীন এই সময়টিতে শিক্ষার্থীরা যেন বাড়িতেই থাকেন সেটি নিশ্চিত করতে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া সব কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

কিন্তু ‘স্কুল ফুটবল চলবে’, সোমবার দুপুরে বলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনের কর্মকর্তা ও স্কুল ফুটবলের অন্যতম পরিচালক অমিত খান শুভ্র।

১৭ই মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা জাতীয় স্কুল ফুটবল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃপক্ষ বলছে পুরোদমে লিগ চলবে বাংলাদেশের সাতটি ভেন্যুতে।

এর আগে করোনাভাইরাস ইস্যুতে নানা প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পেশাদার লিগ কমিটির প্রধাম সালাম মুর্শেদী বলেন, বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের কারণে কিছু ম্যাচ না হওয়ার কথা ছিল, এখন সেগুলো নতুন সূচি অনুযায়ী চলবে।

ওদিকে ঢাকায় চলছে নারীদের ফুটবল লিগও, যেটি ছয় বছর পর এবছরই মাঠে গড়িয়েছে।

মুর্শেদী বেশ কঠোরভাবেই বলেন, সভাপতির নির্দেশ রয়েছে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কিংবা বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশন যেসব ম্যাচগুলো আয়োজন করছে সেগুলোতে দর্শকদের ব্যাপারে কোনও আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বাফুফে সীমিত দর্শক রাখার কথা বলেছে পেশাদার লিগ কমিটির বৈঠকে।

ক্রিকেট বোর্ড ও ফুটবল ফেডারেশন এক প্রকার ভেবেই নিয়েছে যে দর্শকের উপস্থিতি থাকবে না এসব ম্যাচে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ গেমস আয়োজন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

তাবাসসুম ইকবাল ক্রিকেটের একজন ভক্ত, তিনি মাঠে ও টেলিভিশনে নিয়মিত বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলাগুলো দেখে থাকেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে পাকিস্তানে খেলবে না এটা মিস করবো। পৃথিবীটাই থমকে আছে। খেলা স্থগিত করা ঠিকই আছে, আগে তো নিজের জীবন। শুধু আমাদের ক্রিকেট বোর্ড আছে, বাকি দেশের ক্রিকেট বোর্ড কিন্তু খেলা বন্ধ করে দিয়েছে।

এসএইচ-০৭/১৬/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)