শরীর দেখাতে লজ্জা পান না সালাহ!

সিনেমার পর্দায় হলিউড-বলিউডের নায়কদের পেটানো শরীর প্রদর্শন নিয়মিত ঘটনা। ফুটবলের মাঠেও অনেকেই গোল উদযাপন বা নানা ছুতোয় জার্সি খুলে কষ্টে গড়া পেশীগুলো দেখিয়ে থাকেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ইব্রাহিমোভিচদের কাছে এ কাজ করে হলুদ কার্ড দেখাটা তো ডালভাত ব্যাপার। সাম্প্রতিক সময়ে এ তালিকায় যোগ হয়েছে আরও একটি নাম। লিভারপুলের মোহামেদ সালাহকে ইদানীং মুখ খোলার পাশাপাশি কাপড় খুলতেও দেখা যাচ্ছে বেশ।

লিভারপুলের হয়ে মোহামেদ সালাহ কাটিয়েছেন দারুণ এক মৌসুম। আছেন ব্যালন ডি’অর এর লড়াইয়েও, যদিও করিম বেনজেমার অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পর সালাহ’র সম্ভাবনা খুব একটা দেখাছেন না কেউ। বরং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে লিভারপুলের হারের জন্য অনেকটা দায় সালাহ’র কাঁধেই চাপাচ্ছে অনেকেই। ফাইনালে যে বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেছেন মিশরীয় মেসি।

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে স্তাদে দি ফ্রান্সের সেই ফাইনালের কথা উঠলেই সালাহ আলোচনায় আসছেন আরও একটা কারণে। ফাইনালের আগে যে মাদ্রিদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড। পারেননি তার কোথায় ‘প্রতিশোধ’ নিতেও। বরং চোখের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা নিয়ে উৎসব করতে দেখেছেন রিয়াল মাদ্রিদকে।

তবে দম্ভ কমছে না এই মিশরীয়র। তার চোখে তিনি তার পজিশনে বিশ্বসেরা। অনেকের মতেই বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই উইঙ্গারের কণ্ঠে এমন দম্ভ খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি তার সমর্থকরাও।

এদিকে সালাহ মেতে আছেন নিজের পেটানো শরীর প্রদর্শনে। বিচিত্র রকমভাবে গোল উদযাপন করা সালাহকে প্রায়ই দেখা যায় গোল করে জার্সি খুলে বাতাসে পতাকার মতো উড়াতে। শুধু গোল উদযাপনেই নয়, সালাহ অবকাশে কিংবা আড্ডাতেও কাপড় রাখতে চান না শরীরে। অবশ্য এমন সুন্দর শরীর দেখানোয় লজ্জাও পান না তিনি।

ফ্রান্স ফুটবলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত অনেক কিছু নিয়ে কথা বলেছেন সালাহ। কথায় কথায় নিজের বাসায় ব্যায়ামাগারের অবস্থা, তার ডায়েট, জার্সি খুলে উদযাপন, সবকিছুই নিয়ে কথা বলেন তিনি। সেখানেই সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, এমন নিখুঁত শরীর থাকলে সেটি দেখানোয় লজ্জা থাকতে নেই!

ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন একটা ঝরঝরে শরীর পেতে এত কষ্ট করবেন, তখন এ শরীর দেখানো নিয়ে আর লজ্জা কিসের!’

সালাহ এই পেটানো শরীরটার জন্য যে পরিমাণ কষ্ট করেন সেটা শোনার পর অবশ্য তার শরীর দেখানোটাকে যে কেউ যৌক্তিক বলেই মেনে নেবেন। এতো কষ্টে বানানো জিনিস নিয়েই তো দেখনদারি মানায়।

সালাহ নিজেই জানালেন এই শরীর বানাতে কী করেন তিনি। এটাও জানালেন, ঘরকে ব্যায়ামাগার বানানোয় বিরক্ত খোদ সালাহ’র স্ত্রী। কৌতুকের সুরে এই মিশরীয় বলেন, ‘আমার স্ত্রী তো বলে আমি ওর চেয়েও আমার মেশিনের সঙ্গে বেশি সময় কাটাই।’

সালাহ’র স্ত্রীর বিরক্তির কারণ অবশ্য পরের কথা থেকেই বোঝা যাবে,

‘ঘরে দুটি কক্ষ বরাদ্দ ফিটনেস মেশিনগুলোর জন্য। বাসায় আমি ক্রাইওথেরাপি (ভীষণ ঠান্ডার মাধ্যমে ক্লান্তির ধকল সামলাতে) নিতে পারি, একটা হাইপারবারিক চেম্বারও আছে (সাধারণ অবস্থার চেয়ে বাতাসের চাপ ২-৩ ডিগ্রি বাড়িয়ে ফুসফুসে বাড়তি অক্সিজেন জোগানোর ব্যবস্থা)। আমি সব সময়ই আমার শরীরের অবস্থা আরও ভালো করার চেষ্টা করে যাই।’

সালাহ’র বর্ণানা এখানেই অবশ্য শেষ নয়। ব্যায়ামের পাশাপাশি যোগ সাধনাটাও আছে ফারাওয়ের প্রাত্যহিক কর্মতালিকায়। বাসাটাকে তিনি রীতিমত একটা হাসপাতাল বানিয়ে রেখেছেন। আর এ জন্য স্ত্রীর কটূক্তিও শুনতে হয় নিয়মিত। তিনি যোগ করেন, ‘আমি প্রতিদিন ঘরে একা একা ১০-২০ মিনিটের মতো যোগব্যায়ামের চেষ্টা করি। এটা সত্যি যে আমার ঘরটাকে মাঝেমধ্যে হাসপাতাল মনে হয়। আমার স্ত্রী এটা একেবারেই পছন্দ করে না।’

শুধু ব্যায়াম করলেই তো হবে না। খেলাধুলা ও ব্যায়ামের শক্তির জন্য তো খাবারটার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি যথাসম্ভব বাদ দিতে হয় ফাস্টফুড। সালাহ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেন এসব খাবারও। তিনি জানালেন তার ডায়েট চার্টও।

‘আমার ব্রকোলি পছন্দ। মিষ্টি আলু, মাছ, মুরগি আর সব সময় সালাদ খাই। আর লন্ডনে বড় রেস্টুরেন্টে নিজেকে ভালো কিছুর স্বাদ দিতে চাইলে সুশি খাই। মাসে সর্বোচ্চ একবার পিৎজা খাই। বার্গারও আমার পছন্দের, তবে সেটা বলতে গেলে খাই-ই না। কারণ, ওটা খাওয়ার পর পেট ভারী লাগে।’

তবে শরীরের দিকেই শুধু নজর দিচ্ছেন না সালাহ, নজর রাখছেন শিরোপা ও ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারের দিকেও। গেল মৌসুমে কোয়াড্রাপল শিরোপার সম্ভাবনা জাগিয়েও ক্যারাবাও কাপ ও এফএ কাপেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। নতুন মৌসুমে তাই পাখির চোখ করছেন লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিও। আশ্বাস দিচ্ছেন এবার না পারলেও সামনের মৌসুমে ব্যালন ডি’অর জয়েরও। জর্জ উইয়াহর পর দ্বিতীয় আফ্রিকান হিসেবে জিততে চান ব্যালন ডি’অর।

সালাহ বলেন, ‘আমি এই পুরস্কার জিতে জর্জ উইয়াহর পাশে বসতে চাই, যিনি কিনা (ব্যালন ডি’অর বিজয়ী) একমাত্র আফ্রিকান। এটা সত্যি যে ২০২১ সালে নিজের র‍্যাঙ্কিং (ব্যালন ডি’অরের ভোটে সপ্তম হয়েছিলেন সালাহ) দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। এই বছরে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারটা একটু পিছিয়ে দিয়েছে, যদিও ফাইনালে আমি ভালোই খেলেছি। তবে এই হারের কারণে তো আগের এত মাসের অর্জন মিথ্যা হয়ে যাবে না।’

এসএইচ-১৬/১৩/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)