বাজে ফর্ম কাটিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে চোখ বাংলাদেশের

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য দুর্ভেদ্য এক ধাঁধা যেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের শক্তির জানান দিলেও টি-টোয়েন্টিতে টাইগাররা নিতান্তই শিশু। বড় দলের সঙ্গে যেমন লড়াই করতে ব্যর্থ তেমনি মাঝে মাঝেই লজ্জায় পড়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা শক্তির কাছে হেরেও। এই ফরম্যাটে সাফল্য বলতে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা। আরেকটি এশিয়া কাপ সামনে রেখে ফের আশায় বুক বাধছে বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বলে-কয়ে হারাতে পারে যে কাউকে। তবে কথাটা যদি হয় টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে তবে টাইগারদের হারাতে পারে যে কেউ। মাঝে মাঝে বড় দলদের হারালেও এই ফরম্যাটে নিয়মিত জয়ের অভ্যাস এখনও গড়ে তুলতে পারেনি টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে জয় একটাই। সেটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই প্রথম আসরে। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে হারালেও, হারের রেকর্ড আছে স্কটল্যান্ডের মতো সহযোগী দলের বিপক্ষেও।

তারপরও বাংলাদেশ আশা দেখছে আসন্ন এশিয়া কাপে। আরব আমিরাতে হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটায় অতীতের সাফল্যই আশা দেখাচ্ছে লাল-সবুজের বাহিনীকে। এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত দুবার ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা। যার মধ্যে একবার ছিল ২০ ওভারের ফরম্যাটের। তাই ফের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে তারা। এক্ষেত্রে দলটার শক্তির জায়গা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আক্রমণাত্মক নেতৃত্ব। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।

অনেক নাটকীয়তার পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। গত কিছুদিন টি-টোয়েন্টিতে দলের পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে তাকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ফরম্যাটে সাকিবের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে দেশ বিদেশের লিগে খেলায় সাকিব যেভাবে পারফর্ম করেছে তা দলের চিন্তায় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন জাতীয় দল সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

বিসিবির অন্যতম পরিচালক ও জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিবের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। সে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও খেলেছে বেশি। সঙ্গে তার পারফরমেন্সটাও অনেক বেশি উজ্জ্বল ও কার্যকর। তাই সব মিলিয়ে সাকিবকেই সেরা পছন্দ বলে মনে হয়েছে।’

ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে গেছেন ইনফর্ম লিটন দাস। দলে নেই ইয়াসির রাব্বি ও সোহানও। তারপরও বাকিদের মধ্য থেকেই সম্ভাব্য সেরা দলটা বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মত সুজনের। দলের কম্বিনেশন সাজাতে অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

এশিয়া কাপে দলের লক্ষ্য নিয়েও স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, দলের পারফরম্যান্সটা ভালো না হলেও খেলাটার সুর ঠিকঠাক ধরতে পারলেই অনেকদূর যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, আমি বলছি না যে, বাংলাদেশ দল একবারে বদলে যেয়ে আমরা এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব কিন্তু আমরা ওই পথটা ধরতে চাই যে, কীভাবে আমরা এই ফরম্যাটে ভালো করতে পারি। ১২০ বলের খেলায় আপনার সময়টা খুব কম যে আপনি ডিসিশন নিবেন, যেটা আমরা ওয়ানডেতে পারি। গিয়েই আপনাকে মারতে হবে বা রানের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে। ওই অ্যাগ্রেসিভ ক্রিকেটটা , ফেয়ারলেস ক্রিকেটটা আমরা সবার মধ্যে চাই। তাই আমি বিলিভ করি যে, এশিয়া কাপে আমরা ওইভাবেই চিন্তা করব।’

প্রথম দুই ম্যাচের প্রতিদ্বন্দ্বী আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার দিকেই নজর দলের। তিনি যোগ করেন, ‘ আমাদের আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম দুইটা ম্যাচ আছে। অবশ্যই আমরা দুটি ম্যাচই জিততে চাই। এটা জানি যে, দুবাইতে একটা খেলা, শারজায় একটা খেলা, উইকেট কীরকম হবে এটাও জানি না, সব মাথায় রেখেই আসলে আমরা প্ল্যান করছি। আমি বিশ্বাস করি যে, এশিয়া কাপে আমাদের সেকেন্ড রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে, কিন্তু আমি মনে করি আমরা এটা পারব। এর আগেও এশিয়া কাপে আমরা ফাইনাল খেলেছি। সেটা হয়তো ৫০ ওভার ফরম্যাটে বা ২০ ওভারের ফরম্যাটেও। আমরা ফাইনালটা অবশ্যই খেলতে চাই। কমপ্লিট ক্রিকেট, ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।’

তবে ভালো ক্রিকেট খেলতে নিজেদের খেলায় অ্যাগ্রেসিভনেস নিয়ে আসার বিকল্প দেখছেন না এই সাবেক অলরাউন্ডার। তবে উত্তরসূরি সাকিব নিজের আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্ব দিয়ে দলের সেরাটা বের করে আনতে পারবে বলেই তার বিশ্বাস।

এসএইচ-২৪/১৫/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)