বিদেশি সংবাদমাধ্যমে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল নিয়ে বাংলাদেশের ‘উন্মাদনা’ খবর

ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের উত্তেজনার চিত্র নতুন নয়। এবারও উন্মাদনায় মেতেছেন তারা। বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের এই মাতামাতি নিয়ে এবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।

প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, ব্রাজিল-আর্জন্টিনা নিয়ে বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক, বিশাল বিশাল পতাকা টাঙানো, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে বাড়ির বারান্দা, সেতু রাঙানোর বিষয়। এমনকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারামারির খবরও উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব ৯ হাজার ৫০৩ মাইল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারসের দূরত্ব ১০ হাজার ৪২০ মাইল। তা সত্ত্বেও এ দুই দেশ নিয়ে বাংলাদেশে মাতামাতি চলে। যেসব বাংলাদেশি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে মাতামাতি করেন তাদের সঙ্গে কখনো কোনো ব্রাজিলিয়ান বা আর্জেন্টাইনের দেখা হবে না— তা সত্ত্বেও বাংলাদেশিরা এ দুই দেশ নিয়ে উন্মাদনায় মাতেন।

প্রতিবেদনে আকিব কাদের নামে একজন ব্রাজিলিয়ান সমর্থক এবং নোফেল ওয়াহিদ নামে এক আর্জেন্টাইন সমর্থকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। নোফেল ওয়াহিদ বলেন, কেন মধ্য এশিয়ার একটি দেশ হয়েও সুদূর লাতিন আমেরিকার দুই দেশ নিয়ে বাংলাদশিরা ফুটবল উন্মাদনায় মাতেন এর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না বা এর পেছনে কোনো যুক্তিও নেই।

আকিব এবং ওয়াহেদসহ বেশিরভাগ বাংলাদেশি মনে করেন বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে মাতামাতির শুরুটা হয় ১৯৮০’র দশকের দিকে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফেরার পর সাধারণ মানুষের বাড়িতে রঙিন টিভি আসে এবং বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো দেখার সুযোগ তৈরি হয়। তখন থেকেই শুরু হয় এই উন্মাদনার।

টিভিতে হলুদ জার্সির ব্রাজিল এবং আকাশি নীল রঙ জার্সির আর্জেন্টিনার খেলা দেখানো শুরু হয়। সেই থেকে এই দুই দেশের খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আলাদা এক ভালোবাসা তৈরি হয়।

২০১৪ সালে ব্রাজিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বড় পর্দায় খেলা প্রদর্শনে পুলিশের বাধা এবং ম্যারাডোনার হাত দিয়ে দেওয়া গোলকে অবৈধ বলা নিয়ে বরিশালে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তাছাড়া ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ব্রাজিল ৭-১ গোলে হারার পর ব্রাজিল সমর্থকদের সামনে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কোমল পানীয় সেভেন আপ পান এবং ব্রাজিল সমর্থকদের সেভেন আপ বলে ক্ষেপানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

বেশিরভাগের ধারণা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভের পর থেকেই মূলত এই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উন্মাদনা শুরু। সেসময় মানুষ সাদা-কালো টেলিভিশনের সামনে বসে দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করতেন।

এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেটে দ্রুত উন্নতি করলেও ফিফা র‌্যাংকিংয়ে পড়ে রয়েছে একেবারে তলানিতে। তবু ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের আবেগের কমতি নেই।

এসএইচ-০৭/১৯/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)