বিশ্বকাপ মিশনে লাল-সবুজের যতো কীর্তি (ভিডিও)

দরোজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ক্রিকেটের আদিভূমি ইংল্যান্ডে আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের পর্দা উন্মোচিত হবে আগামী ৩০মে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে ২ জুন থেকে। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায়। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টাইগাররা।

বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপে খেলার দরোজা খুলে যায় ১৯৯৯ সালে। এরপর একে একে মেগা এ ইভেন্টের চার আসরে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে টাইগারদের। টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশনের পাঁচটি আসরে সেরা সাফল্য ২০১৫ বিশ্বকাপ। ওইবার কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত পরাজয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় টাইগাররা। এবারো বাংলাদেশের কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। এবার বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ দলের পরিসংখ্যান ও রেকর্ডের দিকে চোখ রাখা যাক

রোড টু ওয়ার্ল্ডকাপ

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে। ওই টুর্ণামেন্টে চার ম্যাচের দু’টিতে তারা হেরে যায় এবং দু’টিতে জয়লাভ করে। এর সাত বছর পর ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়া কাপে ক্রিকেটে তারা তাদের সর্বপ্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচটি খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতে এবং এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তারপর থেকে প্রতিটি আসরেই খেলছে টাইগাররা। ১৯৯৯, ২০০৩ এবং ২০১১ তিন বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরুতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ২০০৭ আসরে খেলেছে সুপার এইট পর্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলেছে কোয়ার্টারফাইনাল।

জয়-পরাজয়

বিশ্বকাপে অভিষেকের বছরই ১৯৯৯ বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে টাইগাররা তাদের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিয়ে বিশ্বকে। বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে মোট ৩২টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ১১টিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা, হেরেছে ২০টিতে এবং ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। জয়ের হার ৩৫.৪৮ শতাংশ।

সেরা সাফল্য বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্যটি পায় গেল বারই। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে পেরেছিল টাইগাররা। এর আগে ২০০৭ সালে দ্বিতীয় সুপার এইটে খেলতে পেরেছিল তারা।

সর্বোচ্চ রান

২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩২২ রান করেছিল বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রান তাড়াতেও এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

সর্বনিম্ন রান

২০১১ সালের বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা, এটাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর।

সফল জুটি

২০১৫ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকের ১৪১ রান বিশ্বকাপে টাইগার দলের সর্বোচ্চ জুটি।

সবচেয়ে বড় জয়

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ২০১৫ সালে ১০৫ রানের জয় পেয়েছিল টাইগাররা। উইকেটের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়টি বারমুডার বিপক্ষে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৭ উইকেটের জয় পেয়েছিল দলটি।

সফল ব্যাটসম্যান

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান। ২১ ম্যাচে ৩০.০০ গড়ে ৫৪০ রান করেছেন এ অলরাউন্ডার।

ব্যক্তিগত সর্বেোচ্চ সংগ্রহ

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপে অপরাজিত ১২৮ রান করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ইনিংস।

সেঞ্চুরি

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মাত্র ২টি সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। সে দুটিই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে সর্বোচ্চ ৫টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটিও মাহমুদউল্লাহর। ২০১৫ বিশ্বকাপে মোট ৩৬৫ রান করেছিলেন তিনি।

মার ছক্কা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব। দুইজনই ৬টি করে ছক্কা মেরেছেন। তবে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টি ছক্কা মেরেছিলেন তিনি।

শতরানের জুটি

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মাত্র তিনটি শতরানের জুটি গড়তে পেরেছেন। তিনটিই ২০১৫ সালে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর করা ১৪১ রানের জুটিটি বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ।

বেলিংয়ে দুর্দাান্ত:

ব্যাটিংয়ের মতো বল হাতেও বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব। তিন আসর খেলে ৩৫.৩৮ গড়ে মোট ২৩টি উইকেট নিয়েছেন এ অলরাউন্ডার।

সেরা বোলিং

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশি বোলারই পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেননি। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ রানের খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। যেটা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা।

সর্বাধিক উইকেট

এক আসরে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন এ স্পিনার।

সর্বোচ্চ ডিসমিসাল

বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের মালিক মুশফিকুর রহিম। তিনটি বিশ্বকাপ খেলে মোট ১৮টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি।বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের মালিকও মুশফিক। ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪টি ডিসমিসাল করেছিলেন এ উইকেটরক্ষক। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৮টি ডিসমিসাল করেন মুশফিক, যা এক আসরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ।

ক্যাচ শিকারী

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ দিয়েছেন তামিম ইকবাল। তিনটি বিশ্বকাপ খেলে মোট ৯টি ক্যাচ ধরেছেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪য়ি ক্যাচ নিয়েছেন সৌম্য সরকার।

সেরা বোলিং নৈপুণ্য

বিশ্বকাপে বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে সেরা বেলিং পারফরমেন্স শফিউল ইসলামের। ২০১১ আসরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তার ২১ রানে ৪ উইকেট শিকার বিশ্বকাপে টাইগার দলের সেরা বোলিং নৈপুণ্য।

এসএইচ-০২/২৮/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)