গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে মালয়েশিয়া সরকার হঠাৎ অভিযান শুরু করায় দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বহু বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে বন্ধ হওয়ার এক বছর পরও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নতুন করে চালু করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের কর্মীদের দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য মালয়েশিয়া।

জানা গেছে, আগের মতো ব্লক রেইড (এলাকা বেছে বেছে অভিযান) দিয়ে বিদেশি শ্রমিকদের না ধরলেও পথে পথে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ। সঙ্গে পাসপোর্ট না পেলেই আটক করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কর্মীদের পাসপোর্ট নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকে। রাস্তায় আটক হওয়ার ভয়ে অনেকে অভিবাসন বুথে (সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে চান যারা) পর্যন্ত যেতে পারছেন না। তাদের লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বৈধ কাগজপত্র সঙ্গে নেই এমন বিদেশি শ্রমিকদের নির্বিঘ্নে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে গত জুলাই মাসে দ্য ব্যাক ফর গুড প্রোগ্রাম বা মঙ্গলের জন্য ফিরে যাওয়া কর্মসূচি শুরু করে মালয়েশিয়া সরকার। এর আওতায় অবৈধ কর্মীরা ১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এরই মধ্যে ধরপাকড় চলছে।

মালয়েশিয়ার বহির্গমন বিভাগের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম দ্য স্টার অনলাইনের এক খবরে গত শনিবার বলা হয়েছে, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড এলাকার সাতটি সবজি ও ফুলের খামারে অভিযান চালিয়ে ১২ বাংলাদেশিসহ ৩৯ জন বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। বৈধ নিয়োগপত্র ছাড়া কাজ করার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে।

সাধারণ ক্ষমা চলাকালীন মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় চলার কথা নয় বলে জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ধরপাকড়ের কোনো অভিযোগ তারা পাননি। হাইকমিশনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

বিভিন্ন দেশের ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসী মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে মনে করছে অভিবাসন খাত নিয়ে কাজ করা এশিয়ার ২০টি দেশের আঞ্চলিক সংগঠন ক্যারাম এশিয়া। তবে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কতো, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমবিভাগ বলছে, সংখ্যাটি কয়েক হাজার হতে পারে। তবে এই হিসাবের সঙ্গে একমত নন অভিবাসন খাতে কাজ করা দেশের উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মত, মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা দেড় লাখ থেকে দুই লাখের কম হবে না।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিরা জানান, একজন বৈধ কর্মী ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ রিঙ্গিত বা ১৬০ থেকে ২০০ টাকা আয় করলেও অবৈধ কর্মী আয় করেন মাত্র ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

মালয়েশিয়ার বহির্গমন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ২৭২ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। মূলত জুলাই থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে অভিবাসন পুলিশ। কয়েক শ বাংলাদেশি পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে গেছেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর মালয়েশিয়া থেকে ৭ হাজার ৩৭২ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। আর এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ফিরেছেন প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ অভিবাসী।

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, বিদেশি শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমার সঙ্গে বিদেশি কর্মী আটকের বিষয়টি সম্পৃক্ত নয়। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ বহির্গমন আইনসহ নানা কারণে সন্দেহভাজন লোকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই যোগাযোগ করছেন। ১ আগস্ট থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০০ কর্মী হাইকমিশনে আসছেন। মূলত যাদের কাছে পাসপোর্ট, নিয়োগপত্র বা কোনো কাগজপত্র নেই, তারাই শুধু হাইকমিশনে এসে দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করছেন।

সাধারণ ক্ষমার আওতায় স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সুযোগ দিতে ১৮ জুলাই ৫ মাসের সময় বেঁধে দেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন বিন মোহাম্মদ ইয়াসিন। মালয়েশিয়ার বহির্গমন বিভাগের আওতায় এ জন্য দেশজুড়ে ৮০টি কাউন্টার খোলা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীরা প্রতিদিন বহির্গমন কার্যালয়ের কাউন্টারে উপস্থিত হয়ে আউটপাস সংগ্রহ করছেন। প্রত্যেক অভিবাসীকে ৭০০ রিঙ্গিত (১৪ হাজার টাকা) জরিমানা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো মালয়েশিয়ার সরকার। দেশটির সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, ওই সময় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৭ জন বাংলাদেশি আবেদন করেন। তবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বৈধ হতে আবেদন করেন প্রায় ৬ লাখ। শেষ পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ পান ২ লাখ ৮০ হাজার ১১০ জন।

এসএইচ-১১/২০/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)