আম গাছে এসেছে মুকুল

চলছে মাঘ মাস। শীতের ভরা মৌসুম। অথচ এরমধ্যেই রাজশাহীর অনেক আম গাছে মুকুলের দেখা মিলছে। এতে চাষিরাও খুশি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন- ভরা শীতে গাছে মুকুল আসা তেমনটা ভালো নয়। কারন আগেভাগে মুকুল আসায় ঘন কুঁয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে কমবে আমের ফলন। মুলত নির্ধারীত সময়ের আগেই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় জাতের আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বারোমাসি ও লোকাল জাতের গাছে এই মুকুল দেখা দেয়। ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিক থেকে সব গাছেই মুকুল আসতে শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তীব্র শীতে মুকুল ফোটায় কিছুটা বিঘœ ঘটলেও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার গাছগুলোতে মুকুলের সমারহ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহানগরীর রায়পাড়া শিরোইল, ভেড়িপাড়া, পুলিশ লাইন, মেহেরচন্ডি ও ভদ্রা আবাসিক এলাকায় আম গাছে মুকুল আসতে শুরু হয়েছে। সোনারাঙা সেই মুকুলের পরিমাণ কম হলেও সৌরভ ছড়াচ্ছে বাতাসে। মুকুল আসা শুরু হবে বলে বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাগানের মালিক ও লিজ নেয়া ব্যবসায়ীরা।

আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন- পৌষের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে তারা বুঝছেন, আমের মৌসুম এসে যাচ্ছে। বাগানের গাছগুলোর যত্ন নিতে পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছেন। ভালো ফলনের আশায় জোরেশোরে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।

রাজশাহী বিভিন্ন এলাকা জুড়ে শীতের তীব্রতা বিরাজ করলেও আগাম জাতের ঐ সকল আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। আর সারা বাংলাদেশে রয়েছে ২’শ ৫০ জাতের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফজলী, গোপাল ভোগ, মোহন ভোগ, ন্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, কৃষাণ ভোগ, মল্লিকা, লক্ষণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বিন্দাবনী, আরজান, রাণী পসন, মিশ্রীদানা, সিঁন্দুরী, আশ্বিনা সেই সাথে নানা প্রকার গুটি আম। রাজশাহীতে আম বাগান রয়েছে ১৬ হাজার ৫শ ১ হেক্টর জমিতে।

রাজশাহী ফল গবেষনা কেন্দ্রের সুত্র জানায়, ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অবধি বারোমাসি বা লোকাল জাতের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। তবে এবার জানুয়ারির শুরুতেই মুকুল আসা শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসেই মুলত আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা ও ঘনকুয়াশার কারনে গাছের মুকুল নষ্ট হতে পারে।

রাজশাহী মহানগরীর গুড়িপাড়া এলাকার আম চাষি সরাফত আলী জানান, তার ৫টি গাছের একটি আম বাগান রয়েছে। অধিকাংশ গাছেই মুকুল দেখা দিয়েছে। তাও খুব সামান্য। গতবার ডিসেম্বরের শেষ দিকে মুকুল আসা শুরু হয়েছিল। সম্ভাব্য মুকুলের মাথাগুলোকে পোকা মাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। তবে গেলো কিছুদিন থেকে ঘন কুয়াশার কারনে মুকুল কিছুটা নষ্ট হয়েছে। পুরোনো জাতের গাছগুলোতে মুকুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিক পর্যন্ত সব গাছে মুকুল দেখা যাবে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী ফল গবেষনা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম জানান, গেলো দু’সপ্তাহ থেকে গাছে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুলত আবহাওয়াগত কারনে দেশীয় জাতের গাছে এই আগাম মুকুল আসছে। এর কোন বৈজ্ঞানীক ব্যাখা তেমন নেই। বিশেষ করে আটি আম, ফজলি আম গাছে মুকুল আসছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন বলে তিনি জানান। প্রত্যেক বছরেই কিছু গাছে আগাম মুকুল আসে। ঘন কুয়াশার কবলে না পড়লে, এসব মুকুলেও ভালো আম হবে। তবে নিয়ম মেনে মাঘের শেষ দিকে যেসব গাছে মুকুল আসে, তাতে ভালো ফলন হয়।

এসএইচ-০৮/২৭/২০ (সুমন হাসান)